
পুরান ঢাকার ঐতিহাসিক রোজ গার্ডেন ভবন ক্রয়ে রাষ্ট্রের প্রায় ৩৩২ কোটি টাকার ক্ষতির অভিযোগে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এই ভবনেই স্বাধীন বাংলাদেশের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী আওয়ামী লীগের যাত্রা শুরু হয়েছিল।
বুধবার (১৯ নভেম্বর) দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, “যাদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যাবে, তাদের বিরুদ্ধে কমিশন ব্যবস্থা নেবে।”
প্রাথমিক অনুসন্ধানে অভিযোগ উঠেছে, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে ‘রোজ গার্ডেন’ ভবন ক্রয়ের মাধ্যমে রাষ্ট্রের ৩৩২ কোটি টাকার ক্ষতি করা হয়েছে। অভিযোগের ভিত্তিতে প্রাপ্ত তথ্য ও নথি যাচাই-বাছাই করে কমিশন এই অনুসন্ধান শুরু করেছে।
২০১৮ সালে ব্যক্তি মালিকানাধীন এই পুরাকীর্তি ভবনটি তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার কিনে নেয়। ক্রয়ে ব্যয় হয়েছিল ৩৩১ কোটি ৭০ লাখ ২ হাজার ৯০০ টাকা। ৮ আগস্ট ২০১৮ সালে সরকারের ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে এটি অনুমোদিত হয়।
রোজ গার্ডেন ভবনটি ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন দুই দিনব্যাপী সম্মেলনের মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের জন্মদাতা হিসেবে পরিচিত। পরবর্তীতে এই দল ‘আওয়ামী লীগ’ নামে পরিচিতি পায়। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দলটি স্বাধীনতা আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
ভবনের ইতিহাসও বিশেষ। ১৯৩১ সালে ঋষিকেশ দাস ২২ বিঘা জমিতে এই বাগানবাড়ি তৈরি করেন, যেখানে দেশ-বিদেশ থেকে আনা বিরল প্রজাতির গোলাপের বাগান এবং করিন্থীয়-গ্রীক শৈলীতে প্রায় ৭ হাজার বর্গফুট আয়তনের দোতলা ভবন নির্মিত হয়।
ঋষিকেশ দাস দেউলিয়া হওয়ার পর ১৯৩৬ সালে বাড়িটি বিক্রি হয়। পরবর্তী মালিকদের মধ্যে থাকেন বই ব্যবসায়ী আব্দুর রশিদ ও তার ভাই কাজী হুমায়ূন। ১৯৭০ সালে বাড়িটি ভাড়া দেওয়া হয় মোশন পিকচার্স লিমিটেডকে, যা ‘বেঙ্গল ষ্টুডিও’ নামে পরিচিত হয়। ১৯৯৩ সালে স্টুডিও চলে গেলে বাড়ি ফিরে আসে কাজী হুমায়ূন পরিবারের হাতে।
১৯৮৯ সালে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর ভবনটি সংরক্ষিত ঘোষিত করলেও মালিকানা মূল পরিবারের কাছে ফিরে আসে। শেষ পর্যন্ত বর্তমান মালিক লায়লা রকীব ও তার সন্তানদের কাছ থেকে রেজিস্ট্রেশন দলিল মূলে ভবনটি ক্রয় করা হয়।