
ভারতের ব্যবসায়িক জগতে বড় ধরনের ধাক্কা হিসেবে এসেছে রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের রাশিয়া থেকে তেল আমদানি বন্ধের ঘোষণা। যুক্তরাষ্ট্রের চাপে ভারত ইতোমধ্যেই রাশিয়ার তেল কেনা কমিয়েছিল, আর এবার দেশের ধনকুবের মুকেশ আম্বানির নেতৃত্বাধীন সংস্থা পুরোপুরি এই পথে হাঁটল।
রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, গুজরাটের জামনগর শোধনাগারের জন্য তারা রাশিয়া থেকে অপরিশোধিত তেল আনা বন্ধ করেছে। সংস্থাটি উল্লেখ করেছে, “১ ডিসেম্বর থেকে জামনগরের শোধনাগার থেকে যে পণ্য রপ্তানি হবে সেগুলো এমন অপরিশোধিত তেল থেকে তৈরি হবে যা রাশিয়া থেকে আনা হয়নি। ২০২৬ সালের ২১ জানুয়ারি থেকে পণ্য আমদানির ওপর কার্যকর হতে চলা ইইউ বিধিনিষেধের জন্যই এই কাজ নির্ধারিত সময়ের আগে করা হয়েছে।”
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাশিয়ার তেলের ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা রিলায়েন্সের এই সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করেছে। ইইউর নিষেধাজ্ঞা আগামী ২১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হবে। এর আগে গত অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার দুই বৃহৎ তেল কোম্পানি রোসনেফ্ট এবং লুকঅয়েলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল, যা ২১ নভেম্বর থেকে কার্যকর হচ্ছে।
রিলায়েন্সের মুখপাত্র জানিয়েছেন, বর্তমানে শোধনাগারে আগে কেনা রুশ তেলের মজুত থেকে পণ্য তৈরি হচ্ছে, যা শেষ হলে আর তারা রাশিয়ার তেল কিনবে না। রোসনেফ্টের সঙ্গে রিলায়েন্সের প্রায় প্রতিদিন ০.৫ মিলিয়ন ব্যারেলের তেলের চুক্তি ছিল। মার্কিন নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হওয়ার পর এই চুক্তি আর চালানো যাবে না।
এদিকে হোয়াইট হাউজ রিলায়েন্সের পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে। হোয়াইট হাউজের প্রেস অফিস জানিয়েছে, “আমরা এই পরিবর্তনকে স্বাগত জানাই এবং ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে অর্থবহ বাণিজ্য আলোচনা এগিয়ে নেওয়ার অপেক্ষায় আছি।”
যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষোভের প্রধান কারণ ছিল রাশিয়ার তেল কেনা, যা ট্রাম্প উল্লেখ করেছিলেন। তিনি দাবি করেছিলেন, রাশিয়ার তেল বিক্রির অর্থ ইউক্রেনে যুদ্ধ চালানোর খরচ জোগাচ্ছে এবং তাতে ভারতের ক্রয়ও ভূমিকা রাখছে। ট্রাম্পের এই সতর্কবার্তা ইউরোপীয় দেশগুলোর ক্ষেত্রেও প্রভাব ফেলেছে। ইউরোপীয় কাউন্সিল জানিয়েছে, ২০২৮ সালের ১ জানুয়ারির মধ্যে তারা রাশিয়ার তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস কেনা সম্পূর্ণ বন্ধ করবে।
ইইউ-ও রুশ তেল আমদানি বন্ধ করায় রিলায়েন্সের মতো ভারতীয় বেসরকারি তেল আমদানিকারক সংস্থাগুলোর ওপর প্রভাব পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রভাব ফেলতে না দিয়ে রিলায়েন্স আগেভাগেই কঠোর সিদ্ধান্ত নিল।