
ময়মনসিংহের তারাকান্দায় বৃদ্ধ হালিম উদ্দিন আকন্দ ফকিরকে প্রকাশ্যে অপমান করে তার চুল ও দাড়ি কেটে দেওয়ার ঘটনায় অবশেষে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) বিকেলে ময়মনসিংহ নগরী থেকে মজনু মিয়া (৪৭) নামে ওই ব্যক্তিকে আটক করা হয়। তিনি উপজেলার কাশিগঞ্জ এলাকার মৃত রজব তালুকদারের ছেলে।
তারাকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) টিপু সুলতান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, মজনু মিয়া মামলার এজাহারভুক্ত আসামি।
এর আগে গত শনিবার বিকেল পৌনে ৩টার দিকে হালিম উদ্দিনের ছেলে মো. শহীদ আকন্দ বাদী হয়ে থানায় মামলা করেন।
ভুক্তভোগী হালিম উদ্দিন অভিযোগ করে বলেন, “সেদিন বাজারে গেলে তারা আমাকে ধরে জোর করে চুল-দাড়ি কেটে দেয়। লোকজনও তখন কম ছিল। প্রাণপণ চেষ্টা করেও রেহাই পাইনি। আমি আল্লাহর কাছে বিচার দিয়েছি, এখনও বিচার চাই।”
তিনি আরও জানান, অন্তত আট-নয়জন ওই সময় উপস্থিত ছিল, যাদের মধ্যে স্থানীয় নয়ন ও মজনুও ছিলেন। ঘটনার পর থেকেই তারা ভয়ভীতি দেখাচ্ছে বলে দাবি তার।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কোদালিয়া গ্রামের বাসিন্দা হালিম ফকির ৩৭ বছর ধরে চুল-দাড়ি না কেটে ভিন্ন জীবনযাপন করছিলেন। শাহজালাল (র.) ও শাহ্ পরানের (র.) মাজারে যাওয়া পর থেকেই তার বেশভূষায় পরিবর্তন আসে। এরপর তিনি কবিরাজি ও ফকিরি জীবনে প্রবেশ করেন। তাকে নিয়ে পরিবার বা এলাকাবাসীর কোনো অভিযোগ ছিল না।
হেনস্তার ঘটনার পর থেকে হালিম উদ্দিন গভীর বিষণ্নতায় ভুগছেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, কখনও আবেগ, কখনও ক্ষোভ—ঘটনাটি নিয়ে কথা বললেই তার কণ্ঠে হতাশা ভর করে।
এদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর ব্যাপক সমালোচনার ঝড় ওঠে। বিশেষ করে অসহায়ের মতো চুল কাটা অবস্থায় তার মুখ থেকে বের হওয়া বাক্য— “আল্লাহ, তুই দেহিস”—এখন প্রতিবাদের স্লোগানে পরিণত হয়েছে।
প্রতিবেশীরা জানাচ্ছেন, হালিম ফকির মানসিকভাবে অসুস্থ নন। তিনি স্ত্রী, ছেলে-মেয়েসহ সংসার জীবনে স্বাভাবিকভাবেই বসবাস করতেন। এক সময় কৃষিকাজ করলেও পরে কবিরাজির মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ শুরু করেন। স্থানীয় হাট-বাজারেও তার নিয়মিত যাতায়াত ছিল।
ঘটনাটি ঘটে কোরবানির ঈদের কয়েক দিন আগে, কাশিগঞ্জ বাজারে। একদল লোক আচমকা তাকে ঘিরে ফেলে চুল ও দাড়ি জোরপূর্বক কেটে দেয়। প্রতিরোধের চেষ্টা করলেও তাদের শক্তির সঙ্গে তিনি পেরে ওঠেননি।