
ময়মনসিংহ নগরীতে একটি খানকা শরিফে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। শুক্রবার দুপুরে নগরের সুতিয়াখালী বাজার এলাকায় ঘটে যাওয়া এ ঘটনায় স্থানীয়দের একাংশ ‘অসামাজিক কার্যকলাপের’ অভিযোগ তুললেও, সুফি অনুসারীরা একে সহিংস উগ্রতার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে দেখছেন। হামলার সময় খানকায় কেউ না থাকায় হতাহতের ঘটনা না ঘটলেও, সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে অভিযোগ।
স্থানীয়দের ভাষ্য অনুযায়ী, নগরের ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের সুতিয়াখালী বাজারে ‘আতে রাসুল খাজা বাবার দায়রা শরিফ’ নামের খানকাটি পরিচালনা করে আসছিলেন উসমান গণি ফকির। প্রায় ১৭ বছর আগে তিনি বাজারের একপাশে একটি ঘর নির্মাণ করে সেখানে নিয়মিত মিলাদ, কাওয়ালি গান ও ভক্তদের আড্ডার আয়োজন শুরু করেন। এই খানকায় প্রতি শুক্রবার রাতে কাওয়ালির আসর বসত, যা ধীরে ধীরে স্থানীয় কিছু মানুষের বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
ভুক্তভোগী খাদেম উসমান গণি ফকির অভিযোগ করেন, ‘জুমার নামাজের সময় একটি গ্রুপ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সন্ত্রাসী কায়দায় খানকায় ভাঙচুর ও মালামাল লুট করে নিয়ে গেছে। হামলার সময় আমরা কেউ সেখানে ছিলাম না। ঘর-দরজা ভেঙে কুপিয়ে তছনছ করেছে, সাউন্ডবক্সের সেট নিয়ে গেছে। এখানে প্রায় সাড়ে ১৭ বছর ধরে আস্তানা ছিল। এখানে খাজা বাবার দায়রা শরিফে মিলাদ হতো, গানবাজনা হত। কিন্তু কোনো কিছু না বলে হঠাৎ আজ ভেঙে দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে আমি থানায় অভিযোগ দেব।’
ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত সেখানে পৌঁছায়। ময়মনসিংহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘এলাকাটিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পীরের আস্তানা রয়েছে। সেখানে বিভিন্ন রকমের কার্যকলাপ হয়, যা স্থানীয় সাধারণ মানুষের পছন্দ হচ্ছিল না। সেখানে সাউন্ড সিস্টেমে গানবাজনা করা হয়। ভক্তরা এসে আড্ডা দেয়, নামাজ-কালাম নাই। এর আগেও কয়েকবার স্থানীয় বাসিন্দারা তাদের সতর্ক করেছে। আজকেও সেখানে গানবাজনার আয়োজন করলে এলাকার কিছু ছেলেপেলে গানবাজনার জিনিসগুলো ভেঙে দিয়েছে। খবর পেয়ে সেখানে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। এ ধরনের ঘটনা অপ্রত্যাশিত। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
বাংলাদেশ সুফিবাদ ঐক্য পরিষদের সভাপতি খলিলুর রহমান চিশতী জানান, খানকা ভাঙচুরের বিষয়টি তাকে ফোনে জানানো হয়েছে এবং তিনি এ ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তার ভাষায়, খানকায় গানবাজনা ও আড্ডা চলত এবং জায়গাটি সরকারি হওয়ায় কেউ কেউ বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছিল।
ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে ময়মনসিংহ বাউল সমিতির সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম (আসলাম) বলেন, ‘সুফি এবং বাউল দর্শন কখনোই সহিংসতা ও বিশৃঙ্খলা সমর্থন করে না। সুতরাং যেকোনো দরবার, দরগা, মাজার ও আস্তানা ভেঙে যারা আমাদের মুসলিম সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য বিনষ্ট করছে, তাদের প্রতি ঘৃণা জানাই।’
পুলিশ জানিয়েছে, হামলার বিষয়ে এখনো আনুষ্ঠানিক অভিযোগ জমা পড়েনি। তবে অভিযোগ পাওয়া মাত্র আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ঘটনাটি নিয়ে এলাকাজুড়ে উত্তেজনা বিরাজ করছে।