
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রস্তাবিত সংশোধনী দ্রুত অনুমোদন করে ফ্যাসিবাদের মতো তামাককেও বাংলাদেশ থেকে সম্পূর্ণ নির্মূল করার আহ্বান জানিয়েছেন।
বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বাংলা একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে নারী মৈত্রী আয়োজিত ‘নারী, শিশু ও তরুণদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী করার গুরুত্ব’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি বলেন, “স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সংশোধনী প্রস্তাবগুলো ক্যাবিনেটে তুললেও রাজস্বের অজুহাতে পাসে বিলম্ব করা হচ্ছে। তামাক কোম্পানির লবিং এত শক্তিশালী যে আমরা প্রতিনিয়ত পিছিয়ে যাচ্ছি। আমরা যখন দেশ থেকে ফ্যাসিবাদকে তাড়াতে পেরেছি, তামাককেও একইভাবে নির্মূল করতে হবে।”
সভায় জানানো হয়, ২০০৫ সালের তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন (সংশোধনী ২০১৩) বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল (এফসিটিসি)-এর সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ করতে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ বেশ কিছু প্রস্তাবনা দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে, পাবলিক প্লেসে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্মোকিং জোন বাতিল, তামাকজাত পণ্যের প্রদর্শনী ও বিজ্ঞাপন বন্ধ, ই-সিগারেট নিয়ন্ত্রণ, বিড়ি-সিগারেটের খুচরা বিক্রি নিষিদ্ধ, তামাক কোম্পানির কর্পোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা (সিএসআর) কার্যক্রম বন্ধ এবং প্যাকেটে সচিত্র সতর্কবার্তা ৯০ শতাংশে বৃদ্ধি করা।
স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব শেখ মোমেনা মনি বলেন, “সম্প্রতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড তামাক কোম্পানির সঙ্গে বৈঠকের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা আন্তর্জাতিক চুক্তির লঙ্ঘন। এফসিটিসি অনুযায়ী নীতিনির্ধারণ প্রক্রিয়া থেকে তামাক কোম্পানির প্রভাব দূর করতে হবে। অথচ এখন উল্টো হচ্ছে।”
বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. গোলাম মহিউদ্দিন ফারুক বলেন, “তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন কার্যকর হওয়ার পর রাজস্ব আয় ১২ গুণ বেড়েছে। তামাক ব্যবহার কমলেও রাজস্বে প্রভাব পড়েনি, বরং তামাকজনিত রোগে চিকিৎসার খরচ রাজস্ব আয়ের চেয়ে বেশি।”
জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের মহাপরিচালক মো. আখতারউজ-জামান বলেন, “প্রতিদিন ৪৪২ জন মানুষ তামাকের কারণে প্রাণ হারাচ্ছে। এই রাজনীতি বন্ধ করে জরুরি ভিত্তিতে সংশোধনী পাস করতে হবে।”
তরুণদের উদ্দেশে নারী মৈত্রীয়ের ইয়ূথ এডভোকেট মাহমুদুল হাসান হামীম বলেন, “তামাক কোম্পানিগুলো তরুণদের টার্গেট করছে। ছোটবেলা থেকে অভ্যাস করালে তারা সারাজীবন ভোক্তা থেকে যাবে। এটি প্রতিরোধে সংশোধনী দ্রুত পাস করতে হবে।”
সভায় নারী মৈত্রীয়ের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আকতার ডলি সভাপতিত্ব করেন। উপস্থিত ছিলেন তামাকবিরোধী মায়েদের ফোরাম, শিক্ষক ফোরাম, ইয়ূথ ফোরাম ও বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিনিধি।
বক্তারা উল্লেখ করেন, জনস্বাস্থ্য রক্ষায় এবং সুস্থ, তামাকমুক্ত জাতি গঠনের লক্ষ্যে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের প্রস্তাবিত আইন সংশোধনী দ্রুততম সময়ে পাস করা অত্যন্ত জরুরি।