
আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলে শক্তিশালী ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৬২২ জনে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া এখন পর্যন্ত এক হাজার জনের আহত হওয়ার খবর জানা গেছে। সংবাদমাধ্যম দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে।
রাষ্ট্রায়ত্ত সম্প্রচারমাধ্যম আরটিএ জানায়, ৩১ আগস্ট স্থানীয় সময় রাত ১১টা ৪৭ মিনিটে ভূমিকম্পটি আঘাত হানে। মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএস জানিয়েছে, রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৬ এবং উৎপত্তিস্থল ছিল মাত্র ৮ কিলোমিটার গভীরে। এরপর অন্তত ১৩টি আফটারশক অনুভূত হয়, যেগুলোর মাত্রা ছিল ৪.৫ থেকে ৫.২।
ভয়াবহ এই কম্পনে রাজধানী কাবুল পর্যন্ত কেঁপে ওঠে, যা কেন্দ্রস্থল থেকে প্রায় ২০০ কিলোমিটার দূরে। পাকিস্তানের ইসলামাবাদেও ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সীমান্তবর্তী কুনার প্রদেশের নুর গুল জেলা। এছাড়া সাওকি, ওয়াটপুর, মানোগি ও চাপা দারায় হতাহতের খবর পাওয়া গেছে।
আফগানিস্তানের দুর্যোগ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দুর্গম এলাকায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় উদ্ধারকাজ ব্যাহত হচ্ছে। ভূমিধসে সাওকি ও নুরগুল জেলার একাধিক সড়ক বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে ক্ষতিগ্রস্তদের কাছে পৌঁছাতে হিমশিম খাচ্ছে উদ্ধারকারী দল। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, কুনার প্রদেশে তিনটি গ্রাম সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়েছে এবং বহু গ্রামে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র শরাফাত জামান বলেন, “হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।” রয়টার্স প্রকাশিত ছবিতে দেখা গেছে, হেলিকপ্টারে আহতদের সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে, সেনা ও চিকিৎসকদের সঙ্গে স্থানীয়রাও উদ্ধারকাজে অংশ নিচ্ছেন।
এই ভয়াবহ ভূমিকম্পের আগে গত সপ্তাহান্তে আকস্মিক বন্যায় নানগারহার ও কুনার প্রদেশে অন্তত পাঁচজনের মৃত্যু হয়। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) জানিয়েছে, বন্যায় প্রায় ৪০০ পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। নতুন করে ভূমিকম্প আঘাত হানায় দুর্যোগকবলিত মানুষের দুর্ভোগ আরও বেড়ে গেছে।
ভৌগলিকভাবে আফগানিস্তান ভূমিকম্পপ্রবণ দেশ। ভারতীয় ও ইউরেশিয়ান টেকটোনিক প্লেটের মিলনস্থলে অবস্থান করায় এখানে প্রায়ই কম্পন অনুভূত হয়। ইতিহাস বলছে, গত তিন দশকে শুধু ভূমিকম্পেই আফগানিস্তানে প্রাণ হারিয়েছে অন্তত ১০ হাজার মানুষ।
১৯৯১ সালে হিন্দুকুশ অঞ্চলে ভূমিকম্পে প্রাণ হারিয়েছিল ৮৪৮ জন। ১৯৯৭ সালে সীমান্তবর্তী ইরানে ৭.২ মাত্রার ভূমিকম্পে মৃত্যু হয় দেড় হাজারের বেশি মানুষের। আর ১৯৯৮ সালে তাখারে ভয়াবহ ভূমিকম্পে কেবল আফগানিস্তানেই নিহত হন প্রায় আড়াই হাজার মানুষ।