
নারী আসামিদের জন্য রায় প্রদানের ক্ষেত্রে কোনো আলাদা সুবিধা বা বিশেষ সুযোগ নেই বলে মন্তব্য করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম। তিনি বলেন, “সিআরপিসি আইন অনুযায়ী জামিনের ক্ষেত্রে নারী, অসুস্থ ব্যক্তি ও কিশোরদের প্রিভিলেজ বা বিশেষ সুবিধা রয়েছে। তবে রায়ের ক্ষেত্রে নারীকে কোনো অতিরিক্ত সুবিধা দেওয়ার বিধান সাধারণ কিংবা ট্রাইব্যুনাল আইনেও নেই। অর্থাৎ আসামি নারী নাকি পুরুষ তা বিবেচ্য নয়। বরং তিনি কী অপরাধ করেছেন সেই গ্রাভিটি বা গুরুতর বিবেচনার ভিত্তিতেই শাস্তি নির্ধারণ হবে। আর অভিযোগ প্রমাণিত না হলে আসামি খালাস পাবেন।”
রোববার (১৬ নভেম্বর) জুলাই গণহত্যা-সংক্রান্ত শেখ হাসিনার মামলার রায়কে কেন্দ্র করে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি এসব কথা বলেন।
তামিম জানান, জুলাই-আগস্টে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণার তারিখ সোমবার (১৭ নভেম্বর) নির্ধারণ করা হয়েছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, ট্রাইব্যুনাল-১ আগামীকালই রায় ঘোষণা করবে। প্রসিকিউশনও এ বিষয়ে পূর্ণ প্রস্তুত রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, অনুমতি সাপেক্ষে ট্রাইব্যুনাল যে অংশটি উন্মুক্তভাবে পাঠ করবে, তা বাংলাদেশ টেলিভিশনের মাধ্যমে সব গণমাধ্যম সরাসরি প্রচার করতে পারবে।
মামলার অগ্রগতি সম্পর্কে তিনি বলেন, এই মামলায় আনা পাঁচটি অভিযোগই সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে প্রসিকিউশন, এবং আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। পাশাপাশি ভুক্তভোগী শহীদ ও আহতদের পরিবারের কাছে আসামিপক্ষের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে হস্তান্তরের প্রস্তাবও জানানো হয়েছে। তার মতে, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর পুনর্গঠিত এই ট্রাইব্যুনালের এটিই হবে প্রথম রায়।
চলমান মামলাগুলোর ওপর সম্ভাব্য প্রভাব সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তামিম বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থান চলাকালে আনা অভিযোগগুলোর সঙ্গে যদি অন্য মামলার অভিযোগ এক হয়, তবে সেই মামলাগুলো আর চলবে না। কারণ একই অভিযোগে একজন ব্যক্তিকে দুইবার বিচার বা শাস্তি দেওয়া সংবিধানবিরোধী। তবে এর বাইরে কোনো পৃথক অভিযোগ থাকলে তা চলতে পারবে। একইসঙ্গে ট্রাইব্যুনাল যে পাঁচটি অভিযোগ নিষ্পত্তির আওতায় এনেছে, সেই অভিযোগে নতুন মামলা দায়েরও করা যাবে না। পূর্বে কোনো মামলা থাকলে সেটিও স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যাবে।
শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগগুলোর বিষয়ে তিনি বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেন। তার বক্তব্য অনুযায়ী, গত বছরের ১৪ জুলাই গণভবনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনরত ছাত্রদের “রাজাকার” বলে আখ্যায়িত করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, যা ছিল স্পষ্ট উসকানি। সেই রাতেই তিনি তৎকালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মাকসুদ কামালকে ফোন করে ছাত্রদের ওপর নির্যাতন-নিপীড়নের নির্দেশ দেন।
পরে ১৮ জুলাই তিনি ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসকে ফোনে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে মারণাস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দেন এবং হেলিকপ্টার ও ড্রোনের মাধ্যমে ছাত্রদের অবস্থান নির্ণয়ের নির্দেশ দেন। তার অভিযোগ অনুযায়ী, এসব নির্দেশের ফলে দেশজুড়ে ১,৪০০ ছাত্র-জনতা নিহত এবং হাজারো আন্দোলনকারী আহত হন।
পাশাপাশি রংপুরে আবু সাঈদ হত্যা, চানখারপুলে ছয়জন হত্যা এবং আশুলিয়ায় ছয়জনকে হত্যা করে মরদেহ পুড়িয়ে ফেলার অভিযোগও আনা হয়। এই পাঁচটি অভিযোগের ভিত্তিতেই প্রসিকিউশন ফরমাল চার্জ দাখিল করেছিল।
রায় ঘোষণার পর আসামিদের আপিল প্রসঙ্গে তামিম বলেন, আইন অনুযায়ী কোনো আসামি পলাতক থাকলে তিনি গ্রেপ্তার বা আত্মসমর্পণ না করা পর্যন্ত আপিল করতে পারবেন না। রায় ঘোষণার পর থেকে ৩০ দিনের মধ্যে আপিল করার বিধান রয়েছে, তবে তা শুধু গ্রেপ্তার বা আত্মসমর্পণের পরই প্রযোজ্য হবে। স্টেট ডিফেন্সের এখতিয়ার এতে প্রযোজ্য নয়।