
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোনো রাজনৈতিক দলের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার প্রবণতার কড়া সমালোচনা করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান জানিয়েছেন, বিএনপি এমন আচরণের ঘোর বিরোধী। তিনি বলেছেন, মতাদর্শগত ভিন্নতা থাকতে পারে, তবে তা কোনোভাবেই শিক্ষাঙ্গনে একচেটিয়া প্রভাব বিস্তারের অজুহাত হতে পারে না।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর মহাখালীতে গাউসুল আজম কমপ্লেক্সে বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদাররেছিনের নেতাদের সঙ্গে লিয়াজো কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন তিনি।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, "রাজনৈতিক ভিন্ন মত থাকতে পারে এটা ব্যক্তিগত বিষয়। কিন্তু কোনো দলের প্রভাব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ওপর এমনভাবে চাপানো ঠিক না, যেটাতে মনে হয় যেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দখল করা হয়েছে। এটা জবরদস্তি। সেটা কৌশলেই হোক আর বাস্তবেই হোক। আমরা (বিএনপি) এটার বিরোধী।"
তিনি আশ্বাস দেন, বিএনপি যদি রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পায়, তাহলে এমন জবরদস্তিমূলক প্রভাব কোনো প্রতিষ্ঠানেই রাখা হবে না। শিক্ষাক্ষেত্রে স্বাধীনতার পরিবেশ বজায় রাখতে তারা কাজ করবে বলে জানান তিনি।
"আমরা ক্ষমতায় এলে নিশ্চিত করবো যাতে আরবি বিশ্ববিদ্যালয়সহ কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যেনো কারো দখলে না থাকে। শিক্ষার প্রকৃত অগ্রগতি যেন নিশ্চিত হয়," — বলেন নজরুল ইসলাম।
এর আগে বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদাররেছিনের সভাপতি ও দৈনিক ইনকিলাব সম্পাদক এ এম এম বাহাউদ্দীনের সঙ্গে বৈঠক করেন নজরুল ইসলাম খান ও স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমদ।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের কথা স্মরণ করে নজরুল ইসলাম খান বলেন, "তিনি এমন একটি সময়ে বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, যখন দেশের মানুষ একটি এমন রাজনৈতিক শক্তি চেয়েছিল, যারা তাদের আদর্শে বিশ্বাসী হবে এবং ধর্মীয় মূল্যবোধকে সম্মান করবে।"
তিনি আরও বলেন, "তিনি সংবিধানে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ এবং মূলনীতিতে ‘আল্লাহর উপর পূর্ণ বিশ্বাস ও আস্থা’র কথা বলেছেন। শহীদ জিয়া যা করেছিলেন, তা পরে কেউ বদলাতে পারেনি।"
মাদ্রাসা শিক্ষক-কর্মচারীদের সংগঠন জমিয়াতুল মোদাররেছিনকে অরাজনৈতিক ও ধর্মীয় শিক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান হিসেবে আখ্যায়িত করে নজরুল ইসলাম বলেন, "আপনাদের হাত দিয়ে প্রতি বছর লাখ লাখ ছেলে-মেয়ে দ্বীনি শিক্ষায় শিক্ষিত হচ্ছে এবং সমাজে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। আমি আপনাদের কাছে ভোট চাইতে আসিনি, দোয়া চাইতে এসেছি।"
স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমদ বক্তব্যে বলেন, "বিএনপি ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী রাজনৈতিক দল। আমরা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের দল, সংবিধানে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম সংযোজনকারী দল এবং মহান আল্লাহর উপর আস্থা ও বিশ্বাস সংবিধানে সংযুক্তকারী দল।"
তিনি জানান, মাদ্রাসা শিক্ষাকে বিস্তৃত করতে চায় বিএনপি, তবে সেটিকে কোনো নির্দিষ্ট দলের রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করার পক্ষে তারা নয়।
"বাংলাদেশে ইসলাম, কোরআন, সুন্নাহর বিপরীতে শরীয়তবিরোধী কোনো আইন প্রণীত হবে না,"— বলেন সালাহ উদ্দিন আহমদ। তিনি জানান, বিভিন্ন ইসলামপন্থী সংগঠন ও ব্যক্তি— যেমন হেফাজতে ইসলাম, ছারছীনা পীর সাহেব ও আলিয়া ধারার আলেমদের সঙ্গে বিএনপি নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে।
এই উদ্যোগের উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করে নজরুল ইসলাম খান বলেন, "আমরা এমন একটি ঐক্য গড়তে চাই যেখানে কোনো বিভক্তি থাকবে না। দেশের গণতান্ত্রিক চেতনার আলোকে সকল মতাদর্শকে একত্রিত করে আমরা রাষ্ট্র পরিচালনা করতে চাই।"
সভায় বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদাররেছিনের সভাপতি এ এম এম বাহাউদ্দীন জানান, তাদের সংগঠন দেশের ২০ হাজার দরবার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং ৫৫ লাখ শিক্ষার্থীর প্রতিনিধিত্ব করে। তিনি অভিযোগ করেন, "গত ১০ মাস ধরে মাদ্রাসা শিক্ষায় জামায়াতে ইসলাম একক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে।"
তিনি বলেন, আগে শিক্ষার্থীর সংখ্যা আরও বেশি ছিল, তবে বিগত আওয়ামী সরকারের ‘মাদ্রাসা-বিরোধী’ নীতির কারণে তা কমে এসেছে। "এই দেশের মানুষ নিজেদের অর্থে মাদ্রাসা শিক্ষা শুরু করেছিলেন ইসলামী ভাবধারা ও তাহজিব-তামাদ্দুন রক্ষার উদ্দেশ্যে, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে নয়। কিন্তু এখন জামায়াত মাদ্রাসা শিক্ষায় সরাসরি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করছে, যা অত্যন্ত বিপজ্জনক," — বলেন তিনি।
সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন জমিয়াতুল মোদাররেছিনের মহাসচিব অধ্যক্ষ মাওলানা শাব্বীর আহমদ মোমতাজী। এছাড়া জমিয়াতের কেন্দ্রীয় ও বিভিন্ন জেলার নেতৃবৃন্দও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।