
লক্ষ্মীপুরের চন্দ্রগঞ্জ উপজেলার একটি ওয়ার্ডের বিএনপি নেতা আবুল কালাম। তাকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। খুনের ঘটনায় স্থানীয় ছাত্রদলের এক নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলে নিহত কালামের পরিবার। এর মধ্যেই রাত ৯টার দিকে অভিযুক্ত ওই ছাত্রদল নেতা ক্রিকেট খেলার একটি ভিডিও পোস্ট করেন তার ফেসবুক আইডিতে। ভিডিওটি পোস্ট দিয়ে ফেসবুকে তিনি লেখেন “আউট”। ফেসবুকে তার দেওয়া এই পোস্ট হত্যাকাণ্ডকে ইঙ্গিত করেই দেওয়া বলে অভিযোগ তুলেছে নিহত কালামের পরিবার।
আবুল কালাম চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
শনিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে চন্দ্রগঞ্জের মোস্তফার দোকান এলাকায় তাকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয়। অভিযুক্ত কাউসার মানিক বাদল (ছোট কাউসার) স্থানীয় ছাত্রদলের রাজনীতিতে সক্রিয়। তিনি চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়ন ছাত্রদলের সদস্য।
গত বছরের ৭ আগস্ট বিভিন্ন অভিযোগে চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়ন ছাত্রদলের সদস্য কাউসার মানিক বাদলকে (ছোট কাউসার) ছাত্রদল থেকে বহিষ্কার করে লক্ষ্মীপুর জেলা ছাত্রদল। পরবর্তীতে ৩ নভেম্বর পুনরায় কাউসার মানিক বাদলের (ছোট কাউসার) বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে লক্ষ্মীপুর জেলা ছাত্রদল। এলাকায় বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তিনি একটি হত্যা মামলারও আসামি।
এ ছাড়া ছাত্রদল নেতা কাউছারের সঙ্গে এলাকায় প্রভাব বিস্তার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই বিরোধ ছিল আবুল কালামের।
কাউছার ভিডিওটি পোস্ট করেন তার ‘কে এম বাদল’ নামের ফেসবুক আইডি থেকে। ভিডিওতে দেখা যায়, গ্রামের কয়েকজন ক্রিকেট খেলছেন। এর মধ্যে একজন রান-আউট হয়েছেন। ভিডিওতে কাউছারকে দেখা যায়নি।
খুনের ঘটনার পরপরই কাউছার এ ঘটনায় জড়িত বলে দাবি করেন নিহত কালামের স্ত্রী ফেরদৌসী আক্তার। তিনি বলেন, “আমার স্বামীকে খুন হওয়ার পর কাউছারের পোস্ট করা ভিডিওটি কাকতালীয় নয়। এটি হত্যার ঘটনাকে ইঙ্গিত করেই করা হয়েছে।”
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কাউসার মানিক বাদল (ছোট কাউসার) মুঠোফোনে বলেন, “ঘটনার সময় আমি লতিফপুর বাজারের মোস্তফার দোকানেই বসে ছিলাম। দোকানটি ঘটনাস্থল থেকে আধা কিলোমিটার দূরে। কালাম ভাই বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আমার সঙ্গেই বাজারে ঘোরাফেরা করেছেন। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আমি কোনোভাবেই জড়িত নই।”
নিজ দলের একজন নেতার মৃত্যুর পর ফেসবুকে “আউট” লিখে ভিডিও দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে কাউছার বলেন, “বাড়ির সামনে আমি ক্রিকেট খেলেছি, সেই ভিডিও দিয়ে আউট লিখেছি।”
এদিকে বিএনপি নেতা আবুল কালাম নিহত হওয়ার পর রাত ১০টার দিকে ঘটনাস্থলে যান বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি। তিনি তিন দিনের মধ্যে ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করার দাবি জানান। এ্যানি বলেন, “খুনের ঘটনায় যারাই জড়িত রয়েছে, তাদের গ্রেপ্তার করে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। একজনের সঙ্গে আরেকজনের বিরোধ থাকতে পারে, কিন্তু এ কারণে নির্মম, নৃশংসভাবে কাউকে খুন করা কোনোভাবে মেনে নেওয়া যায় না।”
এদিকে এ ঘটনায় আজ দুপুর পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি। নিহত কালামের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে রাখা আছে।
চন্দ্রগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ফয়েজুল আজীম বলেন, “প্রাথমিক তদন্তে কাউছার ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তার ‘আউট’ লেখা ভিডিওটি পুলিশের নজরে এসেছে। চার-পাঁচজন দুর্বৃত্ত ঘটনাটি সংঘটিত করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সবদিক তদন্ত করে পুলিশ অভিযুক্তদের সনাক্তকরণে কাজ করছে।”