
পুঁজিবাজারে তরলতা বাড়াতে ১০ হাজার কোটি টাকার একটি তহবিল গঠনের সুপারিশ করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের গঠিত একটি বিশেষ কমিটি। একই সঙ্গে, ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের জন্য ৪ শতাংশ সুদে ঋণ প্রদানের উদ্দেশ্যে ৩ হাজার কোটি টাকার একটি বিশেষ তহবিল গঠনের প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে।
এই প্রস্তাবগুলি সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ে জমা পড়েছে। চলতি বছরের মার্চে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আনিসুজ্জামান চৌধুরীকে প্রধান করে চার সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছিল। কমিটির অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন বিএসইসির কমিশনার ফারজানা লালারুখ এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের একজন অতিরিক্ত সচিব।
প্রতিবেদনটি পুঁজিবাজারের সার্বিক উন্নয়নের ওপর জোর দিয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) শক্তিশালী করা, রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ সংস্থা ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) পুনর্গঠন এবং স্টক এক্সচেঞ্জের সুশাসন জোরদারের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ ৬০ শতাংশে উন্নীত করতে হবে এবং কর প্রণোদনার মাধ্যমে বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে হবে। এতে এক লাখ টাকা পর্যন্ত লভ্যাংশ আয় করমুক্ত রাখার সুপারিশ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
কমিটি আরও প্রস্তাব করেছে, মূলধনী আয় বা ক্যাপিটাল গেইনের কর কমিয়ে ৫ শতাংশ রাখা, সম্পদ-সমর্থিত সিকিউরিটিজে ২০ শতাংশ কর রেয়াত এবং মিউচুয়াল ফান্ডের কর ছাড়ের মেয়াদ বৃদ্ধির ব্যবস্থা নেওয়া।
১০ হাজার কোটি টাকার তহবিল শুধুমাত্র ইকুইটিতে বিনিয়োগের জন্য ব্যবহৃত হবে এবং এর ব্যবস্থাপনা আইসিবির দায়িত্বে থাকবে। বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত নেবে একটি পেশাদার পোর্টফোলিও ব্যবস্থাপক দল, আর তহবিলের কার্যকারিতা তদারকি করবে সাত সদস্যের একটি কমিটি। এই তদারকি কমিটিতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের দুইজন, আইসিবির দুইজন এবং তিনজন স্বাধীন পোর্টফোলিও বিশেষজ্ঞ বা আর্থিক বিশ্লেষক থাকবেন। আইসিবির পরিশোধিত মূলধন রাইট শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে বাড়ানোর সুপারিশও করা হয়েছে।
ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের জন্য বিশেষ তহবিলের পরিমাণও আরও ২ হাজার কোটি টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে, যাতে তারা ৪ শতাংশ ভর্তুকিযুক্ত সুদে মার্জিন ঋণ পেতে পারেন। বর্তমানে এই তহবিলের পরিমাণ ১ হাজার কোটি টাকা।
প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর সংখ্যা বাড়ানোর জন্য কমিটি স্টক ডিলার, মার্কেট মেকার, পোর্টফোলিও ম্যানেজার, অ্যাসেট ম্যানেজার এবং ফান্ড ম্যানেজারদের বাজারে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার প্রস্তাব দিয়েছে। বর্তমানে তাদের অংশগ্রহণ প্রায় ২০ শতাংশ, যা কমিটির প্রস্তাবে তিন বছরে ৩০ শতাংশ, ছয় বছরে ৪০ শতাংশ, নয় বছরে ৫০ শতাংশ এবং ১২ বছরে ৬০ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
কমিটি ব্রোকারেজ হাউসগুলোকে স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত করার পরামর্শ দিয়েছে এবং এজন্য কমিশনের অধীনে মূলধন সংগ্রহ সংক্রান্ত বিধিমালা সংশোধনের সুপারিশ করেছে। এছাড়া জাতীয় সঞ্চয়পত্র ও ডাকঘর সঞ্চয় প্রকল্পের সুদের হার যৌক্তিক পর্যায়ে নামানোর সুপারিশ করা হয়েছে, যেখানে এই হার পাঁচ বছর মেয়াদি ট্রেজারি বিলের গড় মুনাফার চেয়ে বেশি হবে না।
বিমা কোম্পানিগুলোর পুঁজিবাজারে অংশগ্রহণ বাড়ানো এবং বিএসইসি, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ক্যাপিটাল মার্কেটস (বিআইসিএম) ও বাংলাদেশ একাডেমি ফর সিকিউরিটিজ মার্কেটস (বিএএসএম)-এর মাধ্যমে দেশব্যাপী আর্থিক সাক্ষরতা কর্মসূচি জোরদারের কথাও প্রস্তাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।