
ভারতের কাছ থেকে দেশটিতে অবস্থানরত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিয়ে কিছু জানতে চাওয়ার কোন নির্দেশনা সরকারের পক্ষ থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে দেয়া হয়নি। শেখ হাসিনাকে ফেরানোর ব্যাপারটি রাজনৈতিক, কাজেই সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দেয়া হলে কাজ করবে মন্ত্রণালয়।
বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) বিকালে সাপ্তাহিক সংবাদ ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনকূটনীতি অনুবিভাগের মহাপরিচালক ও মুখপাত্র মো. তৌফিক হাসান এসব কথা বলেন।
শেখ হাসিনাকে ফেরত আনা নিয়ে প্রশ্নের উত্তরে মুখপাত্র বলেন, ‘সরকারে সংশ্লিষ্ট পক্ষ থেকে এখনো কোন নির্দেশনা পাইনি। এটি যেহেতু পররাষ্ট্র সম্পর্কিত বিষয়, উনি (শেখ হাসিনা) যেহেতু বিদেশে রয়েছেন, ফলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে যোগাযোগই শ্রেয়। আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো আমরা কোন নির্দেশনা পাইনি। পাওয়া মাত্রই আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নেব।’
শেখ হাসিনা কি দেশের বাইরে চলে গেছেন, নাকি পলাতক, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়টি কীভাবে দেখছে? জবাবে তিনি বলেন, ‘উনার (শেখ হাসিনার) বর্তমান অবস্থাটা কী আপনারা সবাই যানেন। উনি দেশের বাইরে রয়েছে ও পলাতক দুইটিই সত্যি। কোনটাই মিথ্যা বলা যাবে না।’
শেখ হাসিনাকে ফেরানোর যথাযথ ব্যবস্থাটা কী, উত্তরে তৌফিক হাসান বলেন, ‘যথাযথ ব্যবস্থাটা হচ্ছে অনুষ্ঠানিকভাবে আমরা ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে জানাব। ব্যাপারটি রাজনৈতিক, কাজেই সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দেয়া হলে, আমরা কাজ করব। আর সামনে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার যে পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, সেখানেও এ ব্যাপারে আলোচনার অবকাশ থাকবে। তখন পরিষ্কার হবে, বিষয়টি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কীভাবে দেখছে।’
ভারতে শেখ হাসিনা কী স্ট্যাটাসে অবস্থান করছেন, এ নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে কোন তথ্য রয়েছে কি না, উত্তরে তৌফিক হাসান বলেন, ‘পত্রিকার মাধ্যমে যেটুকু জেনেছি, সেটুকুই জানি। কারণ, আনুষ্ঠানিকভাবে এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে কেউ জানায়নি। আর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও এ বিষয়ে জানতে চায়নি। কারণ, জানতে চাওয়ার কোন নির্দেশনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আসেনি।’
আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ না করতে বিভিন্ন দেশ থেকে সরকারের ওপর চাপ রয়েছে বলে এক উপদেষ্টা জানিয়েছেন, এ নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে কী তথ্য রয়েছে, উত্তরে তিনি বলেন, ‘কোন দেশ থেকে এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে কিছু জানানো হয়নি।’
তৌফিক হাসান বলেন, ‘আজ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এ সংক্রান্ত একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক হয়েছে। ডিসেম্বর মাসে এফওসি হবে এটুকু জানা গেছে। কিন্তু চূড়ান্ত তারিখ কূটনৈতিক পর্যায়ে আলোচনা চলছে। আমরা মনে করছি, এই এফওসিটা হওয়ার মাধ্যমে আমাদের দুই দেশের সম্পর্কে গতি পাবে।’
শেখ হাসিনাকে ফেরানো নিয়ে প্রত্যর্পণ চুক্তির প্রশ্নে তৌফিক হাসান বলেন, ‘সেটা এই মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না। মাত্র একটা আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক হয়েছে। এখনো বহু সময় রয়েছে।’
এফওসিতে আলোচনার বিষয়ে মুখপাত্র বলেন, ‘কী বিষয়ে আলোচনা হবে এটা দুই দেশ মিলে ঠিক করবে। সাধারণত যেটা হয় সব বিষয় নিয়ে এখানে আলোচনা হয়। এই মুহূর্তে ঠিক বলা যাচ্ছে না যে ঠিক কোন বিষয়ে আলোচনা হবে। আশা করি, আলোচনায় সব বিষয় স্থান পাবে। ভিসা নিয়ে যে সমস্যা তৈরি হয়েছে সেটা নিয়ে আমরা আলোচনা করার সুযোগ পাব। যেন অচিরেই এই ভিসা সমস্যার সমাধানে তারা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়।’
ঢাকায় বৈঠক করার বিষয়ে উভয়পক্ষের সম্মতিতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলেও জানান তৌফিক হাসান।
ভারতের সাথে বাংলাদেশের চুক্তি ও সমঝোতা পুনর্বিবেচনার বিষয়টি সময়সাপেক্ষ ব্যাপার বলেও জানান মুখপাত্র। তিনি বলেন, ‘ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে যেসব চুক্তি ও সমঝোতা সই হয়েছে, সেগুলো বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের আওতাভুক্ত। সে কারণে সবার সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। যেটা একটু সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। গত ১০০ দিনে হয় তো এ ব্যাপারে অগ্রগতি সীমিত। কিন্তু আশা করছি, আগামী দিনগুলোতে এ ব্যাপারে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হওয়ার অবকাশ রয়েছে।’