
রাজধানীর সরকারি সাত কলেজকে কেন্দ্র করে প্রস্তাবিত নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশের পক্ষে-বিপক্ষে আন্দোলন থামছে না। নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশের পক্ষে বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা অবস্থান নিয়েছে শিক্ষা ভবনের সামনে, অন্যদিকে অধ্যাদেশের বিপক্ষের শিক্ষার্থীরা শাহবাগে অবস্থান করে তীব্র বিরোধিতা জানিয়ে যাচ্ছে।
সোমবার (৮ ডিসেম্বর) সকাল থেকে রাজধানীর শিক্ষা ভবনের সামনে সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছেন সাত কলেজের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর স্তরের শিক্ষার্থীরা। তারা দ্রুত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ জারির দাবি জানাচ্ছেন।
সরকারি সাত কলেজ হলো- ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা মহিলা কলেজ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল কলেজ, সরকারি বাঙলা কলেজ ও তিতুমীর কলেজ। শিক্ষার্থীরা জানান, কিছু সংখ্যক আন্দোলনকারী গত রাতেও সেখানে অবস্থান নিয়েছিলেন।
দুপুর দুইটার দিকে সরেজমিনে দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা ‘রাষ্ট্র তোমার সময় শেষ, জারি কর অধ্যাদেশ’সহ নানা স্লোগান দিয়ে অধ্যাদেশ দ্রুত জারির দাবি জানাচ্ছেন। এ কারণে সচিবালয় অভিমুখে সড়কের এক পাশ দিয়ে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।
বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের একজন নেতা আবদুর রহমান বলেন, “আমাদের একটাই দাবি, নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ দ্রুত জারি করতে হবে। না হলে আমাদের অবস্থান কর্মসূচি চলবে।”
অন্যদিকে কলেজের স্বাতন্ত্র্য রক্ষা করতে ঢাকা কলেজসহ কয়েকটি কলেজের উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার্থীরাও ধারাবাহিকভাবে বিক্ষোভ করছেন। গতকাল তারা কলেজ ক্যাম্পাস ও আশপাশের সড়ক অবরোধ করেন। পাঁচটি কলেজের শিক্ষার্থী দাবি করেন, ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি’র স্কুলিং মডেলভিত্তিক খসড়া অধ্যাদেশ উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত করবে। তারা শাহবাগ মোড় অবরোধ করে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালান।
কলেজ শিক্ষকেরাও প্রস্তাবিত কাঠামোর বিরোধিতা করছেন। ইডেন মহিলা কলেজের ছাত্রীদের একটি অংশ নারীদের জন্য সংরক্ষণের দাবিসহ পাঁচ দফা দাবি জানিয়েছেন। এছাড়া শনিবার সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরাও স্কুলিং মডেলভিত্তিক কাঠামোর বিরোধিতা করেছেন। সব মিলিয়ে সাত কলেজকে কেন্দ্র করে সৃষ্টি হওয়া সংকট জটিল রূপ ধারণ করেছে।
তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এখনও স্পষ্ট করে বলতে পারছে না, নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ কবে জারি হবে।
ঢাকার এই সাত কলেজে সংকট নতুন নয়। ২০১৭ সালে যথাযথ প্রস্তুতি ছাড়াই কলেজগুলোকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়েছিল। বর্তমানে ইডেন ও তিতুমীর কলেজে শুধুমাত্র স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাঠদান হয়, অন্য পাঁচ কলেজে উচ্চমাধ্যমিক, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর- তিন স্তরেই শিক্ষাদান হচ্ছে। সাত কলেজে মোট শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রায় দেড় লাখ, চলতি শিক্ষাবর্ষে স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষে ভর্তিযোগ্য আসন প্রায় ১১ হাজার। শিক্ষক সংখ্যা সাত কলেজে এক হাজারের বেশি। আন্দোলনের কারণে ক্লাস কার্যক্রম শুরু হচ্ছে না।