
একই উঠোনে গড়ে উঠেছে দুটি ভিন্ন ধর্মের উপাসনালয়; এক পাশে নামাজ, আরেক পাশে পূজা। নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার মোগরাপাড়া ইউনিয়নের ইউসুফগঞ্জ এলাকায় প্রায় দেড় শতাব্দী ধরে শান্তিপূর্ণভাবে চলে আসছে এই ধর্মীয় সহাবস্থান।
১৮৮৩ সালে যাত্রা শুরু করে ইউসুফগঞ্জ জামে মসজিদ ও শ্রী শ্রী সাধুবাবা ব্রহ্মচারী আশ্রম। সময়ের পরিক্রমায় বহু প্রজন্ম পেরিয়ে গেছে, কিন্তু কখনো সৃষ্টি হয়নি কোনো বিরোধ বা সংঘাত। বরং দুই সম্প্রদায়ের মানুষ ধর্মীয় রীতিনীতিকে সম্মান জানিয়ে, পারস্পরিক সহমর্মিতার মাধ্যমে পালন করে চলেছেন নিজেদের ধর্মীয় আচার।
স্থানীয়রা জানান, এই দীর্ঘ সময়ে তারা কখনো কোনো বিশৃঙ্খলার মুখোমুখি হননি। মুসলিম ও হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ একে অন্যের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সহযোগিতা করেন, উৎসবের আনন্দ ভাগ করে নেন মিলেমিশে।
মন্দিরের পুরোহিত বলেন, “আমাদের পূজার আয়োজন সব সময় এমনভাবে করা হয় যাতে মসজিদের নামাজে কোনো অসুবিধা না হয়।”
মসজিদের নিয়মিত মুসল্লি আক্কাস আলী বলেন, “আমরা এখানে দীর্ঘদিন ধরে এক সঙ্গে বসবাস করছি। মুসলমানরা নামাজ পড়ছে, হিন্দুরা পূজা করছে। কোনো সমস্যা হয়নি, হবেও না।”
শ্রী শ্রী সাধুবাবা ব্রহ্মচারী আশ্রম কমিটির সভাপতি শ্রী বিশ্বনাথ দত্ত বলেন, “আজান হলে মুসল্লিরা নামাজ পড়ছেন, আবার পূজার সময় আমাদের অনুষ্ঠানও নির্বিঘ্নে চলছে। উভয়পক্ষ মিলেমিশেই ধর্মীয় আচার পালন করছে।”
মসজিদের ইমাম মাওলানা ইয়াসিন জানান, “হিন্দু সম্প্রদায় এখানে পূজা-অর্চনা নির্বিঘ্নে করে আসছেন। মুসলিম সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে সব সময় সহযোগিতা করা হয়।”
এলাকার বাসিন্দারা মনে করেন, এই মসজিদ ও মন্দির শুধু উপাসনার স্থান নয়, বরং এটি একটি জীবন্ত সম্প্রীতির প্রতীক। তারা জানান, ধর্মীয় ভিন্নতা সত্ত্বেও একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধা ও সহমর্মিতা দেখানোর যে উদাহরণ ইউসুফগঞ্জ তৈরি করেছে, তা সোনারগাঁয়ের মানুষের জন্য গর্বের বিষয়।
এ অঞ্চলের প্রবীণদের বিশ্বাস, এই ঐতিহ্য নতুন প্রজন্মের কাছে ধর্মীয় সহনশীলতার এক উজ্জ্বল নিদর্শন হয়ে থাকবে। তাদের মতে, ইউসুফগঞ্জের সম্প্রীতির চর্চা দেশের সামগ্রিক সাম্প্রদায়িক সহাবস্থানের প্রতিফলন।
সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারজানা রহমান বলেন, “বছরের পর বছর ধরে এখানে মসজিদ ও মন্দিরের কার্যক্রম সমানভাবে চলছে। আসন্ন দুর্গাপূজাও নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হবে বলে আমরা আশাবাদী। এখানকার সম্প্রীতির বন্ধন অটুট থাকবে।”