
বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ আবদুল্লাহ বলেছেন, “দলবাজি পরিত্যাগ করে পেশাদারিত্ব বজায় রাখলেই সাংবাদিকদের ভাগ্যের পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী।” তিনি উল্লেখ করেছেন, কোনো সরকারের লেজুরবৃত্তি না করে নিজের মতাদর্শের সরকারের চোখে চোখ রেখে সাংবাদিকতা করা হলে সাংবাদিকদের আর্থিক ও কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। একই সঙ্গে স্বাধীন গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠাও সম্ভব হবে।
শনিবার (৮ নভেম্বর) বিকেলে রংপুর টাউন হলে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের অনুদানের চেক বিতরণ উপলক্ষে আয়োজিত মতবিনিময় ও সাংবাদিক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মুহাম্মদ আবদুল্লাহ বলেন, “একজন সাংবাদিক হিসেবে আমার ঋণ শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কাছে। তিনি মিডিয়াকে উন্মুক্ত করে আমাদের পথ সুগম করেছেন। তখন চারটি পত্রিকা ছিল, বাকশাল কায়েম করা অবস্থায়। উন্মুক্ত পরিবেশ না হলে আমি সাংবাদিকতা করতে পারতাম না।”
তিনি আরও বলেন, “বিএনপি ক্ষমতায় ছিল ১০ বছর। তখন আমি প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে কাজ করেছি, কিন্তু কোনো তদবিরবাজি করিনি। সাংবাদিকতা করতে হলে নির্মোহ ও দলবাজির বাইরে থেকে কাজ করতে হবে। তা না হলে আমাদের সমস্যা সমাধান হবে না।”
রাজনৈতিক দল ও সাংবাদিকদের আদর্শিক মিলের বিষয়ে অধ্যক্ষ জানান, “আপনার আদর্শ থাকবে, বিশ্বাস থাকবে। বিএনপি বা জামায়াতের আদর্শের সঙ্গে আপনার মিল থাকতে পারে। কিন্তু পেশাগত দায়িত্বের ক্ষেত্রে দলবাজি মেনে চলা যাবে না।”
তিনি পুরনো সাংবাদিক নেতাদের উদাহরণ উল্লেখ করে বলেন, অবিভক্ত ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি আনোয়ার জাহিদ ছিলেন একটি দলের নেতা কিন্তু সাংবাদিক হিসেবে তার কাজ কখনো দলবাজি নয়। নির্মল সেন ও এবিএম মুসা-র ক্ষেত্রেও একই উদাহরণ দেখা যায়। তারা দেখিয়েছেন দল ও সাংবাদিকতাকে আলাদা করা যায়।”
মুহাম্মদ আবদুল্লাহ আরও বলেন, দলীয় দাসত্ব থেকে বেরিয়ে নিজের দলের সরকার থাকলেও চোখে চোখ রেখে অধিকারের প্রশ্নে কথা বলার সৎ সাহস থাকতে হবে। তখন আজকের সমস্যার সমাধান সম্ভব। গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সুপারিশ ও সাংবাদিক সুরক্ষা আইন সংশোধনী প্রস্তাব খসড়ায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, যা সাংবাদিকদের অধিকারের সুরক্ষা বাড়াবে।
সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন রংপুর সাংবাদিক ইউনিয়ন-আরপিইউজের সভাপতি সালেকুজ্জান সালেক, সাধারণ সম্পাদক সরকার মাজহারুল মান্নান, ট্রাস্টের উপ-পরিচালক (অর্থ ও প্রশাসন) এবিএম রফিকুল ইসলাম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আবু সাঈদ, লিয়াকত আলী বাদল, স্বপন চৌধুরী, হুমায়ুন কবির মানিক, একেএম ময়নুল হক, জহির রায়হান, ফরহাদুজ্জামান ফারুক, সাইফুল ইসলাম মুকুল, ফেরদৌস জয়, বাবলু নাগ প্রমুখ।
মতবিনিময় ও সমাবেশ শেষে ট্রাস্টের পক্ষ থেকে রংপুর জেলার ১৯ জন সাংবাদিককে প্রত্যেকে ৫০ হাজার টাকার চেক প্রদান করা হয়। সমাবেশে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের দাবি জানানো হয়।