
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনায় মূল অভিযুক্ত শুটার ফয়সাল করিম মাসুদকে কেন্দ্র করে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে আনছে র্যাব। সর্বশেষ অভিযানে তার পারিবারিক সম্পৃক্ততার নানা প্রমাণ এবং বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও নথিপত্র উদ্ধারের কথা জানিয়েছে বাহিনীটি।
র্যাব জানায়, আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় ফয়সাল করিম মাসুদের বোনের বাসার পাশের এলাকা থেকে দুটি ম্যাগজিন ও ১১টি গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। একই ঘটনায় ফয়সালের বাবা ও মাকে সহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) রাতে র্যাবের গণমাধ্যম শাখা থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গোপন তথ্য এবং আশপাশের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে আগারগাঁওয়ের কর্নেল গলিতে ফয়সালের বোনের বাসা ও পাশের ভবনের ফাঁকা স্থান থেকে দুটি ভরা ম্যাগজিন, ১১টি গুলি এবং একটি চাকু উদ্ধার করা হয়।
এছাড়া ফয়সালের বোনের বাসা থেকে একটি ট্যাব, একটি অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল, একটি পুরনো বাটন মোবাইল, দুটি জাতীয় পরিচয়পত্র, বিভিন্ন ব্যাংকের ১৫টি চেক বই, ছয়টি পাসপোর্ট এবং ৩৮টি ব্যাংক চেক জব্দ করা হয়েছে।
র্যাবের তথ্যমতে, সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, ঘটনার দিন বেলা ১১টার দিকে ফয়সাল করিম ও তার সহযোগী আলমগীর মোটরসাইকেলে করে বাসা থেকে বের হন। পরে বিকেল ৪টার দিকে ফয়সাল, আলমগীর, ফয়সালের মা ও ভাগিনাকে দুই ভবনের মাঝের ফাঁকা জায়গা থেকে কিছু বের করতে দেখা যায়। বিকেল ৪টা ২০ মিনিটের দিকে ফয়সাল ও আলমগীর একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে সেখান থেকে চলে যান।
এরই মধ্যে নরসিংদীতে পৃথক অভিযানে মো. ফয়সাল (২৫) নামের এক যুবককে আটক করেছে র্যাব-১১। অভিযানের সময় তিনটি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। তবে এসব অস্ত্রের কোনোটি দিয়ে হাদিকে গুলি করা হয়েছে কি না, তা ফরেনসিক পরীক্ষার পর নিশ্চিত হওয়া যাবে বলে জানিয়েছে র্যাব। মঙ্গলবার রাতে সদর থানাধীন তরুয়া এলাকার মোল্লার বাড়ির সামনে তরুয়ার বিলে পানির মধ্য থেকে অস্ত্র ও গোলাবারুদগুলো উদ্ধার করা হয়।
এ ঘটনায় শুটার ফয়সালের বাবা মো. হুমায়ুন কবির (৭০) ও মা মোছা. হাসি বেগম (৬০) গ্রেপ্তার হয়েছেন। গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করে র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক উইং কমান্ডার এম জেড এম ইন্তেখাব চৌধুরী বলেন, “মঙ্গলবার ভোর সাড়ে ৫টায় র্যাব-১০-এর একটি দল গোয়েন্দা তথ্য বিশ্লেষণ ও আধুনিক প্রযুক্তির সহায়তায় ঢাকা জেলার দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানাধীন হাসনাবাদ হাউজিং এলাকায় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানে চাঞ্চল্যকর এ হত্যাচেষ্টা মামলার গুরুত্বপূর্ণ আসামি ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান ওরফে শুটার ফয়সালের বাবা ও মাকে গ্রেপ্তার করা হয়।”
র্যাব জানায়, প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, গ্রেপ্তার দম্পতির চার সন্তানের মধ্যে ফয়সাল করিম তৃতীয়। তিনি প্রায়ই ঢাকার আগারগাঁওয়ে তার বোন জেসমিন আক্তারের সপ্তম তলার বাসায় যাতায়াত করতেন। ঘটনার দিন ১২ ডিসেম্বর রাতে একটি কালো ব্যাগ নিয়ে তিনি ওই বাসায় প্রবেশ করেন এবং পরে ভবনের সরু ফাঁকা জায়গায় ব্যাগটি ফেলে দেন।
র্যাবের ভাষ্য অনুযায়ী, ফয়সাল ব্যবহৃত দুটি মোবাইল ফোনের একটি ভবনের ছাদ থেকে ফেলে দেন এবং অন্যটি তার মা হাসি বেগমের কাছে দিয়ে যান। পরে নিজের অবস্থান ঝুঁকিপূর্ণ মনে হওয়ায় তিনি আগারগাঁও থেকে মিরপুর হয়ে শাহজাদপুরে চাচাতো ভাই আরিফের বাসায় আশ্রয় নেন।
র্যাব আরও দাবি করে, ফয়সালের পালানোর সময় তার বাবা হুমায়ুন কবির একটি সিএনজি অটোরিকশা ভাড়া করে দেন এবং কিছু অর্থও সরবরাহ করেন। পরে ফয়সালের বাবা-মা কেরাণীগঞ্জে তাদের ছোট ছেলে হাসান মাহমুদ বাবুলের বাসায় চলে যান।
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) রাজধানীর বিজয়নগর এলাকায় গণসংযোগে অংশ নিতে গেলে চলন্ত মোটরসাইকেল থেকে শরিফ ওসমান হাদিকে লক্ষ্য করে গুলি করা হয়। গুলিটি তার মাথায় লাগে। গুরুতর আহত অবস্থায় প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অস্ত্রোপচার করা হয় এবং পরে তাকে ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। উন্নত চিকিৎসার জন্য সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) দুপুরে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে হাদিকে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়।
হত্যাচেষ্টার এই ঘটনায় পরিবারের সম্মতিতে ইনকিলাব মঞ্চের সদস্যসচিব আব্দুল্লাহ আল জাবের রোববার রাতে পল্টন থানায় মামলা করেন। মামলাটি বর্তমানে ডিবির তদন্তাধীন। এর আগে মামলায় ফয়সালের স্ত্রী, বান্ধবী, শ্যালক, হামলায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিক সন্দেহে একজন, সহযোগী কবীর এবং পালাতে সহায়তার অভিযোগে সীমান্ত এলাকা থেকে আরও দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।