
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সংবাদমাধ্যম ও সাংবাদিকদের উদ্দেশে সতর্কতা জারি করে বলেছেন, অপপ্রচারের কোনো তথ্য যেন সংবাদ হিসেবে প্রচার না পায়, সে বিষয়ে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।
বিবিসি বাংলাকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে তিনি এই মন্তব্য করেন। সাক্ষাৎকারটির দ্বিতীয় অংশ প্রকাশিত হয় মঙ্গলবার, ৭ অক্টোবর।
সাক্ষাৎকারে বিএনপির প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়নের বিষয়ে জনগণের আস্থা অর্জনের কৌশল নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তারেক রহমান বলেন, “স্বাভাবিকভাবেই রাজনৈতিক দল হিসেবে আমাদের একটি পরিকল্পনা রয়েছে। আপনাদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে আমি কিছু কিছু বলেছি।”
তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন, বর্তমানে দেশের রাজনীতিতে সক্রিয় যে দলগুলো রয়েছে, তাদের মধ্যে বিএনপিই রাষ্ট্র পরিচালনার অভিজ্ঞতা রাখে।
একটি উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, “ধরুন, আপনি লন্ডন যাচ্ছেন এবং একটি প্লেনে উঠলেন। প্লেনচালক যদি বলেন, ‘ভাই কিছু মনে করেন না, আমার লাইসেন্স এখনো হয়নি, তবে চেষ্টা করলে হয়তো আপনাকে নিয়ে যেতে পারব’, আপনি কি তাতে উঠবেন? নিশ্চয়ই না।”
তুলনামূলকভাবে একটি অভিজ্ঞ ড্রাইভারের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, সেই চালক পথের গর্তে গাড়ির সামান্য ঝাঁকুনির মধ্যেও আপনাকে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবে, কারণ তার অভিজ্ঞতা আছে। বিএনপির ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য বলে জানান তিনি।
তার ভাষায়, “ভুল-ত্রুটি আমাদের থেকেও হতে পারে। কিন্তু আমরা শিখেছি অতীত থেকে এবং ভবিষ্যতে সেই ভুলগুলো পুনরাবৃত্তি করব না ইনশাআল্লাহ। আমাদের সেই অভিজ্ঞতা এবং প্রতিশ্রুতি আছে, যেটা দিয়ে আমরা বাস্তবায়ন করতে পারব, এবং করতে চাই।”
সংবাদপত্র ও সাংবাদিকদের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার বিষয়ে তিনি বলেন, “জ্বি, ইয়েস পারি। একদম দিতে পারি।”
তিনি বলেন, ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি সরকারের সময় সংবাদমাধ্যমগুলোতে অনেক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল, যেগুলোর সত্যতা ছিল না, বরং সেগুলো ছিল অপপ্রচার। তবুও সেই সময় এগুলোর ওপর কোনো দমন-পীড়ন চালানো হয়নি।
তারেক রহমান প্রশ্ন তোলেন, “আপনি কি শুনেছেন, বিএনপির সময়ে কোনো সাংবাদিককে গুম করা হয়েছে, নির্যাতন করা হয়েছে বা দেশ ছেড়ে যেতে বাধ্য করা হয়েছে?”
তিনি বলেন, “স্বৈরাচারী শাসনের সময়ে অনেক সাংবাদিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, বিদেশে পাড়ি জমাতে বাধ্য হয়েছেন। এখনো অনেকে প্রবাসে অবস্থান করছেন। কিন্তু বিএনপির সময়ে এসব হয়নি।”
তার মতে, সেই সময় বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সংবাদ প্রকাশিত হয়েও তা দমন করা হয়নি, কারণ সরকার সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করেনি।
“যদি সত্যিই বিএনপির সময়ে দমন-পীড়ন চলত, তাহলে সেসব সংবাদ কি প্রকাশিত হতো?” প্রশ্ন করেন তিনি।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচার এবং সংবাদ পরিবেশনের বিষয়টিও তিনি গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরেন। তার বক্তব্য, “অপপ্রচারকে তো অবশ্যই সংবাদ হিসেবে প্রচার করা ঠিক নয়, তাই না?”
সংবাদমাধ্যম নিয়ন্ত্রণে থাকা বিতর্কিত আইন বাতিল করা হবে কি না, এমন প্রশ্নে তারেক রহমান বলেন, এই বিষয়গুলো নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তিনি জানান, “আমরা সাংবাদিকদের সঙ্গে আলোচনা করে ধাপে ধাপে এসব কালো আইন ঠিক করব।”
সাক্ষাৎকারের শেষদিকে তারেক রহমান পুনরায় জোর দিয়ে বলেন, “ভবিষ্যৎ সরকার যেই আসুক, আমরা রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে এটুকু অনুরোধ করব, যেন অপপ্রচার সংবাদ হিসেবে প্রচার না পায়। এ বিষয়ে সকলকে সচেতন থাকতে হবে।”