
বাংলাদেশের অর্থনীতি গত এক বছরে গভীর সংকট পেরিয়ে ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। তার ভাষায়, অর্থনীতি ‘খাদের কিনারা’ ও ‘আইসিইউ’ অতিক্রম করে এখন ‘হাই ডিপেনডেন্সি ইউনিটে (এইচডিইউ)’ অবস্থান করছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, আগামী জানুয়ারির মধ্যে অর্থনীতি ‘ওয়ার্ডে’ ফেরার মতো সুস্থ অবস্থায় পৌঁছাবে।
মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) সচিবালয়ের অর্থ মন্ত্রণালয়ের মাল্টিপারপাস হলে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি। এ সময় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আনিসুজ্জামান চৌধুরী, এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান, অর্থ সচিব ড. মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেক এবং ইআরডি সচিব মো. শাহরিয়ার কাদের ছিদ্দিকী উপস্থিত ছিলেন।
অর্থনীতি কবে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ‘কেবিনে’ ফিরবে—এমন প্রশ্নের জবাবে ড. সালেহউদ্দিন বলেন, “গরিব দেশের অর্থনীতি কেবিনে ফিরবে না, বরং ওয়ার্ডে ফিরবে, তারপর বাড়ি যাবে।” তিনি আরও জানান, ডিসেম্বরের মধ্যে অর্থনীতির কিছু মৌলিক সংস্কার সম্পন্ন করা হবে। ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন থাকায় জানুয়ারি পর্যন্ত স্বাভাবিক সংস্কার কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে বলেও উল্লেখ করেন। রাজনীতিবিদদের উদ্দেশে তিনি সতর্ক করে বলেন, এসব কাজে বাধা দিলে এর দায় বর্তমান সরকারের উপর পড়বে।
বাংলাদেশের ব্যাংকখাত থেকে অর্থ লুটের বিষয়েও তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। তার দাবি, “পৃথিবীর কোথাও ব্যাংকখাত থেকে এভাবে অর্থ লুট হয়নি। একটি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৯৫ শতাংশ, যার বড় অংশ নিয়েছেন চেয়ারম্যান ও তার ঘনিষ্ঠজনরা। এটি জনগণের অর্থ।”
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, অর্থনীতি ইতোমধ্যে ঘুরে দাঁড়িয়েছে, যদিও আরও দ্রুত অগ্রগতি সম্ভব ছিল। তবে আর্থিক খাতে দুর্নীতি, বিশৃঙ্খলা ও সুশাসনের অভাব বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে কাজ করেছে। তার ভাষায়, “এসব কারণেই অর্থনীতি খাদের কিনারা ও আইসিইউতে ছিল, তবে এখন আমরা সেখান থেকে কিছুটা উঠেছি।”
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আসায় ইতিবাচক ইঙ্গিতও দেন তিনি। বর্তমানে মুদ্রাস্ফীতি ৮ শতাংশের ঘরে নেমে এসেছে বলে উল্লেখ করে ড. সালেহউদ্দিন বলেন, “খারাপ খারাপ বলতে থাকলে খারাপই হবে। জিডিপি প্রবৃদ্ধি এখনো নেগেটিভ হয়নি—এখন তা আনুমানিক ৩.৯ শতাংশ, বছর শেষে তা ৫ থেকে ৫.৭ শতাংশে পৌঁছাতে পারে।”
পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার অগ্রগতি প্রসঙ্গে তিনি জানান, একসঙ্গে ১২টি দেশের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে অর্থ ফেরানোর চেষ্টা চলছে। তবে অর্থপাচারকারীদের সক্ষমতা অনেক বেশি হওয়ায় এ প্রক্রিয়া কঠিন বলে স্বীকার করেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ফিলিপাইনে যাওয়া অর্থ ফেরত আনতেও অনেক বেগ পেতে হচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।