
জুলাই–আগস্ট আন্দোলন দমন করতে ছাত্র–জনতাকে নির্মূলের লক্ষ্যেই সব ধরনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল—এমন মন্তব্য করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। তার ভাষ্য অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এই পরিকল্পনার মূল উদ্যোক্তাদের একজন।
মানবতাবিরোধী অপরাধের একটি মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের শুনানি শেষে সোমবার (আজ) দুপুরে ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন। কারফিউ জারি করে গণহত্যায় উসকানির অভিযোগে সালমান এফ রহমান ও আনিসুল হকের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর আবেদনও করেন চিফ প্রসিকিউটর।
প্রেস ব্রিফিংয়ে মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম জানান, সালমান এফ রহমান ও আনিসুল হক তথাকথিত ‘গ্যাং অব ফোর’-এর সদস্য ছিলেন। জুলাই–আগস্ট আন্দোলন দমনে চার সদস্যের এই বিশেষ কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটিতে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাতও অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।
চিফ প্রসিকিউটরের ভাষ্য অনুযায়ী, জুলাই অভ্যুত্থান চলাকালে নিরস্ত্র ছাত্র–জনতাকে হত্যা বা সম্পূর্ণভাবে নিঃশেষ করার পরিকল্পনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল এই চারজনকে। আন্দোলন দমনে কোথায় ও কীভাবে অভিযান চালানো হবে, কী ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করা হবে, কীভাবে হত্যাকাণ্ড ঘটানো হবে এবং কাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠানো বা রিমান্ডে নেওয়া হবে—এসব পরিকল্পনার মূল রূপরেখা তৈরি করেন সালমান এফ রহমান ও আনিসুল হক। পাশাপাশি জরুরি অবস্থা বা কারফিউ জারির বিষয়ে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীকে তারাই পরামর্শ দেন এবং তা কার্যকরের ব্যবস্থাও করেন বলে জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, ট্রাইব্যুনালে সালমান এফ রহমান ও আনিসুল হকের একটি ফোনালাপের অংশবিশেষ বাজিয়ে শোনানো হয়েছে। ওই কথোপকথনে ছাত্র–জনতার আন্দোলন দমনের দুটি কৌশল নিয়ে আলোচনা করা হয়। একটি ছিল কারফিউ জারি করে আন্দোলনকারীদের সম্পূর্ণভাবে দমন করা, আর অন্যটি ছিল সামরিক শাসন জারি করে অভ্যুত্থান নিয়ন্ত্রণ করা। এই দুটি প্রস্তাবই একইভাবে প্রধানমন্ত্রীকে উপস্থাপন করা হয়েছিল।
চিফ প্রসিকিউটর জানান, ওই পরিকল্পনার ভিত্তিতেই ১৪ দলের বৈঠকে কারফিউ জারির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তিনি দাবি করেন, সালমান এফ রহমান ও আনিসুল হকের পরামর্শ, নির্দেশনা ও উসকানির ফলেই জুলাই–আগস্টে গণহত্যা সংঘটিত হয়। তাদের ‘সুপিরিয়র স্ট্যাটাস’ ও ‘জয়েন্ট ক্রিমিনাল এন্টারপ্রাইজ’-এর সমন্বয়েই এই হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত হয়েছে উল্লেখ করে তিনি জানান, সব মিলিয়ে তাদের বিরুদ্ধে আনা পাঁচটি অভিযোগ গঠনের জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করা হয়েছে।