
রাজশাহীর বাঘায় জমি নিয়ে পারিবারিক সংঘর্ষে আহত হয়েছিলেন জাহিদ হাসান (২২)। অথচ সেই ঘটনাকে সরকার পতনের আন্দোলনের আঘাত দাবি করে তিনি এখন ‘জুলাই যোদ্ধা’ হিসেবে গেজেটভুক্ত হয়েছেন। এ নিয়ে এলাকায় চাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে।
চন্ডিপুর গ্রামের রবিউল ইসলামের ছেলে জাহিদ ঢাকায় একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। ২০২৪ সালের ১ আগস্ট তিনি চাকরি ছেড়ে গ্রামে ফিরে আসেন। তখন দেশে চলছিল আওয়ামী সরকার পতনের একদফা আন্দোলন। গ্রামে ফেরার পর জাহিদ পূর্বের শত্রুতা কাজে লাগিয়ে স্থানীয় স্কুলশিক্ষক মুস্তাক আহমেদকে হুমকি দেন। মুস্তাকের পরিবারের সঙ্গে তাদের দীর্ঘদিনের জমি সংক্রান্ত বিরোধ ছিল।
এরপর ৬ আগস্ট, আওয়ামী সরকার পতনের ঠিক পরদিন, মুস্তাকের পরিবারের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন জাহিদ। প্রতিপক্ষের পাল্টা হামলায় গুরুতর আহত হলে স্থানীয়রা তাকে প্রথমে বাঘা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, পরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে।
এ ঘটনায় জাহিদের বাবা রবিউল ইসলাম পূর্ব শত্রুতার জেরে প্রতিপক্ষকে দায়ী করে থানায় মামলা করেন। এতে আটজনকে আসামি করা হয়। পরে উভয় পক্ষের পাল্টাপাল্টি হামলার পর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফিরোজ আহাম্মেদ রঞ্জুর সমঝোতায় ৬ লাখ টাকার বিনিময়ে বিষয়টি মীমাংসা হয়।
কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, ওই চিকিৎসা নথি ব্যবহার করে জাহিদ নিজেকে আন্দোলনে আহত বলে দাবি করেন এবং ‘জুলাই যোদ্ধা’ হিসেবে গেজেট পান। তার গেজেট নম্বর ৮৩৪, আর চিকিৎসা কেস নম্বর ৫৯৯০।
জাহিদের বাবা রবিউল ইসলাম বলেন, “জাহিদকে স্থানীয় কিছু আওয়ামী লীগ সমর্থক লোকজন মেরেছিল। তবে আন্দোলনে সে অংশ নিয়েছিল কি-না তা আমি জানি না।”
কিভাবে তালিকায় নাম এলো জানতে চাইলে জাহিদ উত্তেজিত হয়ে বলেন তিনি আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন, যদিও এ বিষয়ে কোনো প্রমাণ দিতে পারেননি।
প্রতিপক্ষ নয়ন জানান, “জমি নিয়ে আমাদের দীর্ঘদিনের বিরোধ ছিল। ৬ আগস্ট জাহিদ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আমাদের আক্রমণ করতে এলে উল্টো সে আহত হয়ে যায়। পরে তাদের পরিবার আমাদের বিরুদ্ধে মামলা করে। ইউপি চেয়ারম্যানের মাধ্যমে বিষয়টি মীমাংসা হয়।”
ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ফিরোজ আহাম্মেদ রঞ্জু বলেন, “জমি সংক্রান্ত দ্বন্দ্বে জাহিদকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানো হয়েছিল। আল্লাহ তাকে বাঁচিয়েছেন। পরে শতাধিক লোকের উপস্থিতিতে সালিসে সমাধান হয়। তবে সে কিভাবে জুলাই যোদ্ধার গেজেট পেল, তা আমার জানা নেই।”
স্থানীয় শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “৫ আগস্ট দুপুরের পর থেকে এলাকায় আওয়ামী লীগ কর্মীরা ছিল না। তাই সেদিন রাতে তারা কারও ওপর হামলা চালিয়েছে—এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। প্রতারণা করে গেজেট পাওয়া প্রকৃত আন্দোলনকারীদের প্রতি অবিচার।”
একই সুরে স্থানীয় কৃষক রহিম বলেন, “যারা আসলেই আন্দোলন করেছে তারা এখনও গেজেট পায়নি, অথচ মিথ্যা কাগজপত্র দিয়ে কেউ কেউ পাচ্ছে। এটা দুর্নীতি ও প্রতারণা।”
পল্লী চিকিৎসক সাইদুর রহমানের মতে, “জুলাই আন্দোলন ছিল ঐতিহাসিক। সেখানে অংশ না নিয়েও ভুয়া প্রমাণে কেউ যদি স্বীকৃতি পায়, তবে আন্দোলনের মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হবে। প্রশাসনের উচিত এ বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া।”
বাঘা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাম্মী আক্তার জানান, তিনি বিষয়টি শোনার পর ইউপি চেয়ারম্যানকে ফোন করেছিলেন। চেয়ারম্যান জানান এটি জমি সংক্রান্ত সংঘর্ষ, যা সালিসে নিষ্পত্তি হয়েছে। তবে জাহিদ কিভাবে জুলাই যোদ্ধার তালিকায় ঢুকল তা তার জানা নেই।