
একাত্তরের ২৫ মার্চের ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে ভিন্ন ব্যাখ্যা তুলে ধরে জামায়াতে ইসলামীর চট্টগ্রাম মহানগরীর আমির মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেছেন, মুজিব বাহিনীর আগের সহিংস কর্মকাণ্ডের প্রতিক্রিয়াতেই পাকিস্তানি সেনাবাহিনী সেই রাতে অভিযান চালায়।
মঙ্গলবার সকালে মহানগর জামায়াতে ইসলামীর আয়োজনে অনুষ্ঠিত যুব সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। বিজয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এ সমাবেশে নজরুল ইসলাম আরও দাবি করেন, ১৪ ডিসেম্বর দেশের বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড ছিল ভারতীয় সেনাবাহিনীর পরিকল্পনার অংশ। তিনি জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য। বিকেলে নগর জামায়াতের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সমাবেশে অতিথিদের বক্তব্যের বিস্তারিত জানানো হয়।
নজরুল ইসলাম বলেন, “ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় অসংখ্য মানুষের ত্যাগ-কুরবানির বিনিময়ে ১৯৪৭ সালে আমরা স্বাধীনতা লাভ করি। পরবর্তীতে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী ওয়াদা দিয়েছিল, ইসলামের আলোকে, বৈষম্যহীন, ইনসাফপূর্ণ, গণতান্ত্রিক সমাজ গঠন করবে। গণতান্ত্রিক, নিয়মতান্ত্রিকভাবে রাষ্ট্র পরিচালনা করবে।
“কিন্তু তারা সম্পূর্ণ ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। অবশেষে বাধ্য হয়ে আমাদের মুক্তিযুদ্ধে অবতীর্ণ হতে হয়েছে। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে শেখ মুজিবুর রহমান সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের পরও তার হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হয়নি। পাকিস্তানি গোষ্ঠী গড়িমসি করতে করতে শেষ পর্যন্ত ২৫ মার্চ আমাদের যুদ্ধে লিপ্ত হতে হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “কিন্তু সেই রাতের সঠিক ইতিহাস আমাদের জানানো হয়নি। আজকের দিনে ইতিহাসের কালো অধ্যায়গুলো উদ্ধার করতে হবে। মূলত ২৫ মার্চের আগে মুজিব বাহিনী এলাকায় এলাকায় গণহত্যা চালিয়েছিল। এই গণহত্যার প্রতিক্রিয়াস্বরূপ ২৫ মার্চে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী নামিয়ে ক্র্যাকডাউন করে দিয়েছিল। ৫৪ বছরেও আমাদের স্বাধীনতার প্রকৃত ইতিহাস জানতে দেওয়া হয়নি। ভারতের শিখিয়ে দেওয়া গল্প আমাদের গেলানো হয়েছে। আজকের এই দিনে আমাদের প্রকৃত ইতিহাস জানতে হবে।”
নজরুল ইসলামের ভাষায়, “১৯৭০ সালের ৩০ মার্চ লিগ্যাল ফ্রেমওয়ার্ক অর্ডার সই হয়েছিল, সেখানে রাজনৈতিক দলগুলোর ওয়াদা ছিল পাকিস্তানের ঐক্য ভাঙা যাবে না এবং ইসলামের বিরোধিতা করা যাবে না। এবং ১৯৭০ সালের নির্বাচনি ম্যানিফেস্টোতে আওয়ামী লীগ যুক্ত করেছিল কোরআন-সুন্নাহ বিরোধী আইন করা হবে না।
“২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানের কাছে আত্মসমর্পণ করে শেখ মুজিবুর রহমান জেলখানায় আরামে দিন কাটিয়েছেন। সেই ইতিহাস আমাদের উদ্ধার করতে হবে।”
রাজনৈতিক অচলাবস্থার সময়ে শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ভূমিকার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “২১ নভেম্বর আমাদের সশস্ত্র বাহিনী, সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনী ঐক্যবদ্ধভাবে সিদ্ধান্ত নেয় মুক্তিযুদ্ধে আর কোনো বিভক্তি থাকবে না। এ কারণেই দিনটি আমরা সশস্ত্র বাহিনী দিবস হিসেবে পালন করি। ৬ থেকে ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত ভারতীয় সেনাবাহিনী এক সপ্তাহ যুদ্ধ করে আমাদের বিজয়ের নিয়ন্ত্রণ নেয় এবং ঢাকাসহ প্রধান সড়কগুলো দখলে নেয়। এরপর ভারতীয় সেনাবাহিনীর পরিকল্পনায় ১৪ ডিসেম্বর আমাদের শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়।”
মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল এম এ জি ওসমানীর ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, “আত্মসমর্পণ দলিলে তাকে কেন সই করতে দেওয়া হয়নি? আজ আমাদের এসব ইতিহাস জানতে হবে। মুক্তিযুদ্ধে সাড়ে ৭ কোটি শ্রমিক, ছাত্র ও যুবসমাজ ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছিল। ৫৪ বছর ধরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল দেশ শাসন করলেও মানুষ স্বাধীনতার প্রকৃত স্বাদ পায়নি। ২০২৪ সালের জুলাই বিপ্লবের মধ্য দিয়ে মানুষ সেই স্বাধীনতার স্বাদ পেতে শুরু করেছে। তাই ১৬ ডিসেম্বরের পাশাপাশি আমাদের ৩৬ জুলাইকেও স্মরণ করতে হবে।”
জুলাই অভ্যুত্থানের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “জুলাই অভ্যুত্থানে শহিদ হয়েছেন রংপুরের আবু সাইদ, চট্টগ্রামের ওয়াসিম আকরাম, ফয়সাল আহমদ শান্ত, মোহাম্মদ ফারুকসহ শত শত ছাত্র-জনতা। তাদের রক্তদানের মাধ্যমেই এ দেশের যুবসমাজ ভারতীয় বয়ান, হেজিমনি ও ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল।”
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন যুব বিভাগ চট্টগ্রাম মহানগরীর সভাপতি ও নগর জামায়াতের সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ শামসুজ্জামান হেলালী। আলোচনায় আরও বক্তব্য দেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ও চট্টগ্রাম মহানগর সেক্রেটারি মুহাম্মদ নুরুল আমিন, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ও নগর সহকারী সেক্রেটারি মুহাম্মদ উল্লাহ, নগর সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. এ কে এম ফজলুল হক, নগর সাংগঠনিক সম্পাদক ও শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি এস এম লুৎফর রহমান এবং জামায়াত নেতা ডা. আবু নাছের।
সমাবেশ শেষে নগরীর দুই নম্বর গেইট এলাকা থেকে একটি র্যালি বের হয়। র্যালিটি বহদ্দারহাট মোড়ে গিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভার মাধ্যমে শেষ হয়।