পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (পবিপ্রবি) কয়েক কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দুই কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
২১ আগস্ট (বৃহস্পতিবার) বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মো. ইকতিয়ার উদ্দিন স্বাক্ষরিত পৃথক দুটি অফিস আদেশে তাঁদের বরখাস্তের সিদ্ধান্ত হয়।
বরখাস্ত হওয়া কর্মকর্তারা হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাশ ফান্ড অ্যান্ড পেনশন বিভাগের উপপরিচালক মো. রাজীব মিয়া এবং হিসাব বিভাগের ল্যাব অ্যাটেনডেন্ট আবু সালেহ মো. ঈসা। তাঁদের বিরুদ্ধে অন্তত ২ কোটি ৬০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে।
তথ্য অনুযায়ী, ২০১১ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য সাধারণ ভবিষ্য তহবিল (জিপিএফ) থেকে মোটরযান ও কম্পিউটার ক্রয়ে ঋণ চালু করা হয়। পরবর্তীতে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ঋণ গ্রহণ করেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্মীরা এবং নিয়মমতো কিস্তি পরিশোধও করেন। কিন্তু অভিযোগ অনুযায়ী, ওই টাকা ব্যাংকে জমা না করে অভিযুক্তরা ভুয়া ব্যাংক রসিদ দেখিয়ে আত্মসাৎ করেন। চলতি মাসে বিষয়টি সামনে আসার পর ১০ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তদন্ত কমিটি গঠন করে। একইদিন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)ও অভিযান চালায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ও তদন্ত কমিটির সদস্য মো. জসীম উদ্দিন জানান, ছয় সদস্যের কমিটির প্রধান করা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক আবদুল লতিফকে। তিনি বলেন, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের নথি যাচাই করতে গিয়ে ভুয়া ব্যাংক রসিদ ধরা পড়ে। ধাপে ধাপে ২০২৪-২৫ অর্থবছর পর্যন্ত সব কাগজপত্র যাচাই করা হবে। প্রাথমিকভাবে ২ কোটি ৬০ লাখ টাকার গরমিল পাওয়া গেছে। এ ছাড়া জড়িতরা ইতোমধ্যেই ৩২ লাখ টাকা ব্যাংকে জমা দিয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ইকতিয়ার উদ্দিন বলেন, তদন্তে প্রাথমিকভাবে দোষী প্রমাণিত হওয়ায় তাঁদের সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তদন্ত এখনো চলমান, পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন হাতে না আসা পর্যন্ত কিছু বলা যাচ্ছে না।
১৭ আগস্ট দুদকের অভিযানে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসে। পটুয়াখালী কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক তাপস বিশ্বাস জানান, ২০২০-২১ অর্থবছরে ৬৬ জন ঋণগ্রহীতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাঁদের জমা দেওয়া ৫০ লাখ টাকার বেশি ব্যাংকে জমা হয়নি। একইভাবে ২০১৮ সালের ঋণের টাকাও ব্যাংকে জমা না হওয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ সময় ভুয়া ব্যাংক রসিদসহ বেশ কিছু নথি জব্দ করা হয়। জব্দ করা নথি অনুযায়ী আরও ২ কোটি ২৮ লাখ টাকার গরমিল চিহ্নিত হয়েছে, যা আরও বাড়তে পারে। এ জন্য ২০১৮-১৯ থেকে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের সব ঋণ সংক্রান্ত নথি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে চাওয়া হয়েছে।
শিক্ষক ও কর্মচারীরাও অর্থ আত্মসাতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। আইন ও ভূমি প্রশাসন অনুষদের জ্যেষ্ঠ সহকারী শান্তা ইসলাম জানান, তিনি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৩ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছিলেন এবং ২০২২ সালের মধ্যে পরিশোধও করেন। কিন্তু অভিযুক্তরা তাঁকে ভুয়া রসিদ দিয়েছেন। তিনি বলেন, বিষয়টি জানার পর অভিযুক্তদের কাছে গেলে তাঁরা ব্যাংকে জমা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। একইভাবে অ্যাম্বুলেন্স চালক মো. আলমগীর আলম জানান, তিনি জিপিএফ থেকে ৩ লাখ টাকা ঋণ নেন এবং সব কিস্তি পরিশোধ করলেও ৭৬ হাজার ৭২৮ টাকা ব্যাংকে জমা হয়নি। পরে অভিযুক্ত আবু সালেহ মো. ঈসার কাছে গেলে তিনি টাকা ফেরত দেন।
প্রসঙ্গত, অভিযুক্ত দুজনের মোবাইল ফোন একাধিকবার কল করা হলেও বন্ধ পাওয়া গেছে। জানা গেছে, ১৭ আগস্ট দুদকের অভিযানের পর থেকেই তাঁরা আত্মগোপনে রয়েছেন।