
উত্তর কোরিয়া তাদের সামরিক শক্তি প্রদর্শনের অংশ হিসেবে সমুদ্রসীমায় দূরপাল্লার কৌশলগত ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা চালিয়েছে। দেশটির সর্বোচ্চ নেতা কিম জং-উন সরাসরি উপস্থিত থেকে পরীক্ষার তদারক করেছেন এবং দেশটির পারমাণবিক যুদ্ধ সক্ষমতাকে “সীমাহীন ও নিরবচ্ছিন্নভাবে” উন্নয়নের ঘোষণা দিয়েছেন।
সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা কেসিএনএ জানিয়েছে, রোববার পিয়ংইয়ংয়ের পশ্চিমে সমুদ্রের ওপর নির্ধারিত কক্ষপথে ক্ষেপণাস্ত্রগুলো লক্ষ্যবস্তুতে নিখুঁতভাবে আঘাত হেনেছে। কিম জং-উন পরীক্ষার ফলাফল দেখে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেছেন, “শত্রুপক্ষের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পারমাণবিক শক্তি নিয়মিত যাচাই করা একটি দায়িত্বশীল রাষ্ট্রীয় কাজ।”
দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক বাহিনীও পরীক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। তারা জানায়, গতকাল সকালে পিয়ংইয়ংয়ের সুনান এলাকা থেকে একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে। সিউল এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে সতর্ক করেছে যে, বছরের শেষ দিকে উত্তর কোরিয়া আরও বড় ধরনের কৌশলগত পরীক্ষা চালাতে পারে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ২০২৬ সালের শুরুতে উত্তর কোরিয়ার ক্ষমতাসীন ওয়ার্কার্স পার্টির নবম কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে পরবর্তী পাঁচ বছরের উন্নয়ন পরিকল্পনা ঘোষণা করা হবে। এই সম্মেলনের প্রস্তুতি হিসেবে কিম জং-উন সাম্প্রতিক সময়ে একের পর এক যুদ্ধাস্ত্রের পরীক্ষা ও পরিদর্শনে অংশ নিচ্ছেন।
ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার কয়েক দিন আগে, গত বৃহস্পতিবার কিম জং-উন নির্মাণাধীন ৮,৭০০ টন ওজনের পারমাণবিক সাবমেরিন পরিদর্শন করেছিলেন। এ সময় তার মেয়ে কিম জু-আয়েও উপস্থিত ছিলেন, যাকে ভবিষ্যতের উত্তরসূরি হিসেবে ধরা হচ্ছে।
সাবমেরিন কারখানায় দাঁড়িয়ে কিম হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, “দক্ষিণ কোরিয়ার পারমাণবিক সাবমেরিন পরিকল্পনা উত্তর কোরিয়ার নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি, এবং এর কড়া জবাব দেওয়া হবে।” বিশ্লেষকদের মতে, উত্তর কোরিয়া নিজেকে ‘অপ্রতিরোধ্য’ পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
২০১৯ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে শীর্ষ বৈঠক ব্যর্থ হওয়ার পর থেকে উত্তর কোরিয়া পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে আপস না করে সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধি ও অস্ত্র পরীক্ষা চালিয়ে আসছে। বর্তমানে ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার সঙ্গে যৌথভাবে সামরিক সহায়তা এবং ক্রেমলিনের সমর্থন পেয়ে কিম আগের চেয়ে অনেক বেশি আগ্রাসী অবস্থানে রয়েছেন।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, পারমাণবিক ও কৌশলগত ক্ষেপণাস্ত্রের এই নিয়মিত মহড়া কেবল সিউল নয়, বরং ওয়াশিংটনের ওপরও বড় ধরনের কূটনৈতিক চাপ সৃষ্টি করবে। পিয়ংইয়ং স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে যে, তাদের পারমাণবিক বাহিনীকে বিশ্বের সেরা হিসেবে গড়ে তুলতে কোনো সীমাবদ্ধতা বাধা দিতে পারবে না।
সূত্র: আল জাজিরা