
জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানকালে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে বহুল আলোচিত রায় ঘোষণা করেছে পুনর্গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
চার মাস সাত দিনের শুনানি শেষে সোমবার (১৭ নভেম্বর) ঘোষিত রায়ে শেখ হাসিনা ও কামালকে মৃত্যুদণ্ড এবং মামুনকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
তবে আইন বিশেষজ্ঞরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন—এটি বিচারপ্রক্রিয়ার শেষ ধাপ নয়। আদালতের পরবর্তী এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হলো আপিল।
আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন, ১৯৭৩ অনুযায়ী ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে দণ্ডপ্রাপ্ত যে কেউ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আপিল করতে পারবেন। রাষ্ট্র বা অভিযোগকারী পক্ষও চাইলে আপিল দায়ের করতে পারে। তবে পলাতক আসামিদের ক্ষেত্রে আবশ্যিকভাবে আত্মসমর্পণ বা গ্রেপ্তার হওয়ার পরই তাদের পক্ষে আইনজীবী আপিল করতে পারবেন।
আত্মসমর্পণের পর আসামিপক্ষ ট্রাইব্যুনালের বিচারপ্রক্রিয়ার ত্রুটি, অসংগতি বা প্রমাণ বিশ্লেষণে ভুল তুলে ধরে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণের সুযোগ পান। রায় ঘোষণার ৩০ দিনের মধ্যে আপিল করতে হয় এবং ৬০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তির বিধান রয়েছে।
আপিলের পর রয়েছে রিভিউ আবেদন—যা বিচারপ্রক্রিয়ার সর্বশেষ আইনি ধাপ। এখানে আপিল রায়ের সম্ভাব্য ভুল ব্যাখ্যা বা আইনি ত্রুটি চ্যালেঞ্জ করা যায়, এবং অতীতে রিভিউতে দণ্ড পরিবর্তন বা খালাস পাওয়ার উদাহরণও রয়েছে।
তদুপরি, মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আসামি রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনার সুযোগও পান। সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদ অনুসারে রাষ্ট্রপতি চাইলে দণ্ড মওকুফ, স্থগিত বা লাঘব করতে পারেন।
এদিকে রায়ের অংশ হিসেবে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের সব সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যা এনবিআরসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থার মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হবে।