
রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও চব্বিশের জুলাই আন্দোলনের প্রথম শহীদ আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডের মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় আজ মঙ্গলবার ১৮ নভেম্বর চলছে ১৫তম দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ। এ মামলায় সাবেক উপাচার্য হাসিবুর রশীদসহ ৩০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
সাক্ষ্যগ্রহণ অনুষ্ঠিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ, যেখানে বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি বেঞ্চ কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। অন্য দুই সদস্য হলেন অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মঞ্জুরুল বাছিদ এবং জেলা ও দায়রা জজ নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবীর।
আজ ট্রাইব্যুনালে দুইজন সাক্ষীর জবানবন্দি শোনার কথা রয়েছে। এর আগে ১৬ নভেম্বর সাক্ষ্য দিয়েছেন মিঠাপুকুর থানার ওসি মো. নূরে আলম সিদ্দিক। তিনি ১৭ নম্বর সাক্ষী হিসেবে গত বছরের ১৬ জুলাইয়ের ঘটনাবলির বিস্তারিত বর্ণনা দেন। পরে পলাতক ২৪ আসামির পক্ষের রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবীসহ উপস্থিত আসামিদের আইনজীবীরা তাকে জেরা করেন।
প্রসিকিউশনের পক্ষে মামলাটি পরিচালনা করছেন প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম। তার সঙ্গে রয়েছেন প্রসিকিউটর আবদুস সোবহান তরফদার, মঈনুল করিম, সাইমুম রেজা তালুকদার, আবদুস সাত্তার পালোয়ানসহ অন্যান্য আইনজীবী।
এর আগে ১৩ নভেম্বর সাক্ষ্য দেন পুলিশের নায়েক আবু বকর সিদ্দিক। তারও আগে ১২ নভেম্বর জবানবন্দি দেন এসআই (সশস্ত্র) মো. আশরাফুল ইসলাম। তিনি জানান, রংপুর কোতোয়ালি জোনের তৎকালীন এসি মো. আরিফুজ্জামান ও তাজহাট থানার ওসি রবিউল ইসলামের নির্দেশে চালানো গুলিতেই আবু সাঈদ নিহত হন। ১১ নভেম্বর সাক্ষ্য দেন রংপুর কারমাইকেল কলেজের শিক্ষার্থী ইমরান আহমেদ, যিনি ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও আন্দোলনের অংশগ্রহণকারী ছিলেন। ১০ নভেম্বর জবানবন্দি দেন বেরোবির শিক্ষার্থী ও জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতা আকিব রেজা খান। সাক্ষী হাজির না হওয়ায় ৪ নভেম্বর এবং ২১ ও ১৩ অক্টোবর তিন দফা সাক্ষ্যগ্রহণ পিছিয়ে যায়।
নবম দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয় ৬ অক্টোবর। সেদিন জবানবন্দি দেন পুলিশের উপপরিদর্শক এসআই রফিক ও এসআই রায়হানুল রাজ দুলাল। এর আগেই ২৮ আগস্ট এই মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়েছিল আবু সাঈদের বাবা মকবুল হোসেনের জবানবন্দির মধ্য দিয়ে। একই দিনে সাক্ষ্য দেন সাংবাদিক মঈনুল হক।
এ মামলায় গ্রেপ্তার ছয় আসামি হলেন এএসআই আমির হোসেন, বেরোবির সাবেক প্রক্টর শরিফুল ইসলাম, কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায়, ছাত্রলীগ নেতা ইমরান চৌধুরী, রাফিউল হাসান রাসেল এবং আনোয়ার পারভেজ। তাদের উপস্থিতিতেই সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে।
মামলার আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হয় ২৭ আগস্ট চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলামের সূচনা বক্তব্যের মধ্য দিয়ে। তার আগে ৬ আগস্ট ট্রাইব্যুনাল ৩০ আসামির বিরুদ্ধে ফর্মাল চার্জ গঠন করে বিচার শুরুর নির্দেশ দেয়। তবে সাবেক ভিসিসহ ২৪ আসামি এখনও পলাতক। তাদের পক্ষে ২২ জুলাই রাষ্ট্র খরচে চারজন আইনজীবী নিয়োগ দেওয়া হয়।
৩০ জুলাই পলাতক আসামিদের পক্ষে শুনানি করেন রাষ্ট্রনিযুক্ত চার আইনজীবী। এর মধ্যে পাঁচজনের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেন সুজাত মিয়া এবং নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতাদের পক্ষে ছিলেন মামুনুর রশীদ। আরও শুনানিতে অংশ নেন আইনজীবী ইশরাত জাহান ও শহিদুল ইসলাম। ২৯ জুলাই তিন আসামির পক্ষে শুনানি হয়। শরিফুলের পক্ষে লড়েন আমিনুল গণি টিটো, কনস্টেবল সুজনের পক্ষে আজিজুর রহমান দুলু এবং ইমরানের পক্ষে ছিলেন সালাহউদ্দিন রিগ্যান।
২৮ জুলাই ৩০ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের ওপর শুনানি শেষ করে প্রসিকিউশন। আর ৩০ জুন ট্রাইব্যুনাল আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গ্রহণ করে। তদন্ত সংস্থার কর্মকর্তারা ২৪ জুন মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন। মামলায় মোট সাক্ষী ৬২ জন।