
আফগানিস্তানের উত্তরাঞ্চলের ঐতিহাসিক শহর মাজার-ই-শরিফে দাঁড়িয়ে থাকা ‘ব্লু মসজিদ’ বা নীল মসজিদ শুধু স্থাপত্যের অনন্য নিদর্শন নয়, এটি আফগান জাতির গৌরব ও ধর্মীয় অনুভূতির প্রতীক। তিমুরিদ নকশা ও কারুকাজে নির্মিত এই মসজিদকে ঘিরে রয়েছে অসংখ্য কিংবদন্তি ও গল্প।
নির্মাণ ও ঐতিহাসিক পটভূমি
১৫শ শতকে সুলতান হোসেন বায়কারা মসজিদটি নির্মাণের নির্দেশ দেন। অনেকের বিশ্বাস, এখানে ইসলামের চতুর্থ খলিফা আলী ইবনে আবি তালিব (রা.)-এর সমাধি রয়েছে, যদিও প্রচলিত মতে তার কবর ইরাকের নাজাফে। মাজার-ই-শরিফের স্থানীয়রা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন, এই পবিত্র স্থাপনাই তার বিশ্রামস্থান।
মসজিদটি তিমুরিদ যুগের শিল্প ও সংস্কৃতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এর নীলাভ টাইলস, দৃষ্টিনন্দন ক্যালিগ্রাফি ও মহৎ গম্বুজ আজও দর্শনার্থীদের বিমোহিত করে রাখে।
যুদ্ধ, ধ্বংস ও পুনরুত্থান
১৮৬৬ সালে বালখ অবরোধের সময় মসজিদটি বড় ক্ষতির মুখে পড়ে। কিন্তু স্থানীয় জনগণ নিজের জীবন ঝুঁকিতে ফেলে মসজিদকে রক্ষা করেন। ২০শ শতকের শুরুতে বিশেষ উদ্যোগে মসজিদটি পুনর্নির্মাণ ও সংরক্ষণ করা হয়, ফলে এটি তার প্রাচীন জৌলুস ফিরে পায়। পরে ইউনেস্কো এটিকে বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
স্থাপত্য ও সৌন্দর্য
মসজিদের প্রশস্ত প্রাঙ্গণ, ঝরনা ও নীল টাইলসের ঝলমলে সাজে এটি দর্শনার্থীদের মন জয় করে। সূর্যের আলো যখন নীল টাইলসে পড়ে, পুরো স্থাপনাটি নীলাভ আলোতে আলোকিত হয়। এখানে দর্শনার্থীরা এক ধরনের আধ্যাত্মিক শান্তি ও প্রশান্তি অনুভব করেন।
মূল আকর্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে—নিখুঁত নীল টাইলসের কারুকাজ, প্রশস্ত আঙিনা, ঝরনা, মনোমুগ্ধকর ক্যালিগ্রাফি, সুউচ্চ মিনার ও গম্বুজ এবং শান্ত পরিবেশ।
সংস্কৃতি ও অর্থনীতিতে গুরুত্ব
আফগান জনগণের হৃদয়ে গভীরভাবে স্থান করে নেওয়া এই মসজিদকে ঘিরে প্রতি বছর বিভিন্ন সাংস্কৃতিক উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যটকরা এখানে এসে মসজিদের সৌন্দর্য উপভোগ করেন, যা স্থানীয় অর্থনীতিতেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
নীল মসজিদ শুধু ধর্মীয় নয়, এটি আফগান জাতির স্থিতিশীলতা, গৌরব ও সহিষ্ণুতার প্রতীক। শতাব্দী পার হলেও মসজিদটি দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়ে আছে, যেন বার্তা দিচ্ছে—সংঘাত, যুদ্ধ বা সময়ের ঝড়ও আধ্যাত্মিকতার আলো মুছে দিতে পারে না।
এক নজরে ব্লু মসজিদ
অবস্থান: বালখ প্রদেশ, আফগানিস্তান
নির্মাণকাল: ১৫শ শতক
শৈলী: তৈমুরীয় স্থাপত্য
বিশেষত্ব: নীল টাইলস, ক্যালিগ্রাফি, আধ্যাত্মিক পরিবেশ
ভ্রমণের সেরা সময়: বসন্ত মৌসুম