
নেপাল কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ অস্থিরতার মুখোমুখি হয়েছে, যেখানে সহিংসতা ও অগ্নিসংযোগের পর নিয়ন্ত্রণে আনতে রাস্তায় নামানো হয়েছে সেনাবাহিনী। দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির বিরুদ্ধে শুরু হওয়া বিক্ষোভ মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) আরও ভয়াবহ রূপ নেয়, যা শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের মাধ্যমে এক নতুন মোড় নেয়। কিন্তু তাতেও থামেনি সহিংসতা।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানায়, এই আন্দোলনের সূচনাকারী তরুণ প্রজন্মের জেন-জি গোষ্ঠী এখন বিক্ষোভ থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে নিচ্ছে। তারা বলছে, আন্দোলনটি ‘সুবিধাবাদী অনুপ্রবেশকারীরা ছিনতাই করে নিয়েছে’।
প্রথমদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদে শান্তিপূর্ণভাবে শুরু হলেও, পুলিশ গুলি চালালে আন্দোলন সহিংসতায় রূপ নেয়। এই দুই দিনের সংঘর্ষে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ২০ জন। এরপর পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
চাপের মুখে দেশটির প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি পদত্যাগ করেন। এরপর পদ ছাড়েন নেপালের প্রেসিডেন্টও। তবে সহিংসতা থামেনি; রাজধানী কাঠমান্ডুসহ বিভিন্ন শহরে চলতে থাকে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ।
জেন-জি বিক্ষোভকারীদের পক্ষ থেকে মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে জানানো হয়, “মঙ্গলবারের বিক্ষোভ নেপালের জেন-জিদের আয়োজিত। এটি একটি স্পষ্ট দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে পরিচালিত হয়েছিল: জবাবদিহিতা, স্বচ্ছতা এবং দুর্নীতির অবসান।”
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, “আমাদের আন্দোলন অহিংস ছিল, এখনও আছে এবং শান্তিপূর্ণ নাগরিক সম্পৃক্ততার নীতিতে প্রোথিত।” তারা জানান, বিক্ষোভে কোনো সহিংসতা যাতে না হয়, সেজন্য নাগরিকদের সুরক্ষা এবং সরকারি সম্পত্তি রক্ষায় সক্রিয়ভাবে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করেছেন তারা।
তারা জানিয়েছে, বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) থেকে নতুন করে কোনো বিক্ষোভ কর্মসূচি নেই। বরং প্রয়োজনে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সেনাবাহিনী ও পুলিশকে কারফিউ বাস্তবায়নের আহ্বান জানানো হয়েছে।
বিবৃতিতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়, “আমাদের উদ্দেশ্য কখনোই দৈনন্দিন জীবন ব্যাহত করা বা অন্যদের আমাদের শান্তিপূর্ণ উদ্যোগের অপব্যবহার করার সুযোগ দেয়া ছিল না।”
নেপালের সেনাবাহিনীও অভিযোগ করেছে, বিভিন্ন ‘ব্যক্তি এবং নৈরাজ্যবাদী গোষ্ঠী’ বিক্ষোভে অনুপ্রবেশ করে সরকারি ও ব্যক্তিগত সম্পত্তির ক্ষতি করছে। এর ফলে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন একটি সহিংস সংকটে পরিণত হয়েছে।