
চব্বিশের জুলাই-আগস্ট আন্দোলন ঘিরে হত্যা-গণহত্যার দায়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীসহ ১৬ জনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এ সময় প্রিজনভ্যানে সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলককে জাতীয় সংগীত গাইতে শোনা যায়।
সোমবার (৮ ডিসেম্বর) দুপুর দুইটার পর তাদেরকে একে একে প্রিজনভ্যানে তোলা হয়। গাড়িতে উঠতেই পলক জাতীয় সংগীত গাইতে শুরু করেন, যা উপস্থিতদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
সেদিন মামলার অগ্রগতি জানাতে আদালতে হাজির হন প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম। তিনি তদন্ত শেষ করতে আরও দুই মাস সময় চান। শুনানি শেষে ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের প্যানেল আগামী বছরের ৯ ফেব্রুয়ারি প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। ওবায়দুল কাদেরকে কেন্দ্র করে করা মামলার ৪৫ আসামির মধ্যে চারজনের বিরুদ্ধে ফরমাল চার্জ জমা পড়ায় তাদের অব্যাহতি চাওয়া হয়। প্রসিকিউশন জানায়, বাকি আসামিদের বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে উপস্থাপন করা হবে।
সোমবার সকাল পৌনে ১০টার দিকে কেরানীগঞ্জ ও কাশিমপুরসহ বিভিন্ন কারাগার থেকে কঠোর নিরাপত্তায় প্রিজনভ্যানে করে ১৬ জনকে আদালতে আনা হয়। তাদের মধ্যে ছিলেন সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক, সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, সাবেক শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, সাবেক খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, সাবেক কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক, সাবেক নৌমন্ত্রী শাজাহান খান, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাসদ সভাপতি ও সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, সাবেক বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, সাবেক স্বরাষ্ট্রসচিব জাহাংগীর আলম, সাবেক এমপি সোলাইমান সেলিম, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, শেখ হাসিনার সাবেক বেসরকারি শিল্প-বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এবং সাবেক প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার। অসুস্থতার কারণে সাবেক এমপি ফারুক খানকে আদালতে আনা হয়নি।
এর মধ্যে সালমান এফ রহমান, আনিসুল হক, হাসানুল হক ইনু ও জুনায়েদ আহমেদ পলকের বিরুদ্ধে পৃথকভাবে ফরমাল চার্জ দাখিল করেছে প্রসিকিউশন। ইনুর মামলায় ইতোমধ্যে সাক্ষ্যগ্রহণও চলছে। একইসঙ্গে জুলাই অভ্যুত্থানের সময় ইন্টারনেট সেবা বন্ধ রেখে গণহত্যা সংঘটনের অভিযোগে শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় এবং পলকের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গ্রহণ করেছে ট্রাইব্যুনাল-১। জয়ের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি করা হয়েছে।
আনিসুল হক ও সালমান এফ রহমানের বিরুদ্ধে ফরমাল চার্জে কারফিউ জারি করে ছাত্র-জনতাকে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে। আদালত এই অভিযোগ আমলে নিয়ে শুনানির তারিখ নির্ধারণ করেছেন।
প্রসিকিউশন জানায়, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, যুবলীগের সভাপতিসহ মোট সাতজনের বিরুদ্ধে তদন্ত সম্পন্ন হয়েছে এবং শিগগিরই তাদের বিরুদ্ধেও ফরমাল চার্জ দাখিল করা হবে।
এর আগে ১৫ অক্টোবর পৃথক মামলায় ওবায়দুল কাদেরসহ ৪৫ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত শেষ করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল-১। সে সময় প্রসিকিউশন দুই মাস সময় চাইলে আদালত অনুমতি দেন। গত ২০ জুলাইও আরও তিন মাস সময় চাওয়া হয়েছিল, কিন্তু প্রতিবেদন জমা না দেওয়ায় নতুন সময়সীমা নির্ধারণ করেন ট্রাইব্যুনাল।
চলতি বছরের ২০ এপ্রিল মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীসহ ১৯ জনকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়েছিল। ওই দিন তদন্তে আরও তিন মাস সময় চাওয়া হয় এবং পরে ২০ জুলাই শুনানির দিন ঠিক করা হয়। ১৮ ফেব্রুয়ারি ১২ মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও সাবেক প্রধানমন্ত্রীর দুই উপদেষ্টাসহ আরও একদলকে আদালতে আনা হয়েছিল। মোটকথা, এক সময়ের প্রভাবশালী মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও এমপিদের বিরুদ্ধে ধাপে ধাপে পৃথক চার্জ গঠনের প্রক্রিয়া চলছে বলে নিশ্চিত করেছে প্রসিকিউশন।