অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছরের কার্যকাল শেষে এর সাফল্য ও ব্যর্থতা নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে শুরু হয়েছে তীব্র আলোচনা। বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ফেসবুকে সরকারের ১২টি সফলতা তুলে ধরার কিছু সময়ের মধ্যেই পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় নিজের অবস্থান জানালেন গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান।
এক ফেসবুক পোস্টে রাশেদ খান সরকারের ব্যর্থতার একটি তালিকা প্রকাশ করেন, যেখানে তিনি ১২টি দাবি তুলে ধরেছেন, যেগুলো বর্তমান সরকার বাস্তবায়নে ব্যর্থ হয়েছে বলে তার অভিযোগ।
পোস্টে রাশেদ খান লেখেন, ‘হাসিনা দেশ ছেড়েছে’— একে যদি সবচেয়ে বড় সাফল্য বলা হয়, তবে সেটি নিঃসন্দেহে খুবই দুঃখজনক। জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানের এক বছর পরও সরকার এসব গুরুত্বপূর্ণ দাবি পূরণে কোনো অগ্রগতি দেখাতে পারেনি।
রাশেদ খানের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত উল্লেখযোগ্য ১২টি ব্যর্থতা হলো:
- সারা দেশে আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্ট যেসব সন্ত্রাসী রয়েছে, তাদের গ্রেফতার করা হয়নি; বরং বিভিন্ন স্থানে তাদের পুনর্বাসিত করা হয়েছে।
- শেখ পরিবারের কোনো সদস্য আইনের আওতায় আসেনি।
- জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানসহ গত ১৬ বছরে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে যারা নিহত হয়েছেন, সেই ঘটনায় জড়িত পুলিশ, র্যাব, বিজিবির সদস্যদের শনাক্ত বা গ্রেফতার করা হয়নি।
- প্রশাসনের যেসব কর্মকর্তা শেখ হাসিনাকে ‘ফ্যাসিস্ট’ রূপ দিতে সহায়তা করেছেন, তাদের—বিশেষ করে সচিব, ডিসি ও এসপিদের—বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
- পুলিশ ও প্রশাসনে কোনো সংস্কার হয়নি। ঘুষ, তদবির ও দুর্নীতির চর্চা এখনও অব্যাহত রয়েছে।
- এনএসআই ও ডিজিএফআই-এর মতো গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সংস্কার হয়নি। এই সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে ‘আয়নাঘর’ চালানো, গুম-খুন ও তিনটি অবৈধ নির্বাচন পরিচালনার অভিযোগ থাকলেও দায়ীদের বিচার হয়নি।
- বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষক ও প্রশাসনে ছাত্রলীগের নিয়োগপ্রাপ্ত ক্যাডারদের অপসারণ করা হয়নি।
- বিগত ১৬ বছরে অবৈধভাবে চাকরি পাওয়া ব্যক্তিরা এখনও বহাল আছেন।
- যেসব গণমাধ্যম শেখ হাসিনার প্রশংসা করে ফ্যাসিবাদকে সহায়তা করেছে, সেসবের কোনো সংস্কার হয়নি।
- বিচার বিভাগ, সচিবালয়, সরকারি দপ্তর এবং স্থানীয় প্রশাসনে আওয়ামী লীগের গঠিত কাঠামো অপরিবর্তিত রয়ে গেছে।
- জাতিগতভাবে কাউন্সেলিং বা মানসিক সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। দীর্ঘ সময় ধরে ফ্যাসিবাদী পরিবেশে বেড়ে ওঠা প্রজন্মের জন্য মানসিক পুনর্গঠনের কোনো পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়নি।
- শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে মৌলিক সংস্কার বাস্তবায়নে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
রাশেদ খান আরও মন্তব্য করেন, শুধু হাসিনার দেশত্যাগই যদি একমাত্র অর্জন হয়, তবে সেটা যথেষ্ট নয়। একটি নতুন রাষ্ট্র বিনির্মাণ করতে না পারলে এই গণ-অভ্যুত্থানও ব্যর্থ বলেই বিবেচিত হবে।