
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে কলমের হাতে অস্ত্র না থাকুক, যেখানে মাদক ও সন্ত্রাসের স্থান নেই এবং যেখানে আমাদের মা-বোনেরা নিরাপদ ও সম্মানের সঙ্গে চলতে পারেন; এমন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দিকে এগিয়ে যেতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন জামায়াতে ইসলামী আমির ডা. শফিকুর রহমান।
শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) রাজধানীর বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবিরের কেন্দ্রীয় সদস্য সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, “ইসলামী ছাত্র শিবির আজ আর কেবল একটি সাধারণ ছাত্রসংগঠন নয়। চব্বিশের বিপ্লব-পরবর্তী সময়ে দেশের ছাত্রসমাজ এই সংগঠনের প্রতি যে আস্থা ও ম্যান্ডেট দেখিয়েছে, তা নির্দেশ করে; ছাত্রসমাজের অভিভাবকের দায়িত্ব এখন ছাত্র শিবিরের কাঁধে।”
তিনি আরও বলেন, “শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে চরিত্র গঠন, নৈতিক শিক্ষা, আধুনিক জ্ঞান ও গবেষণার পরিবেশ ফিরিয়ে আনার দায়িত্ব আমাদের। অতীতে যে ভয়, সন্ত্রাস ও অনিশ্চয়তার ছায়া নেমেছিল, তা এখনও পুরোপুরি কাটেনি। এই ছায়া দূর না হওয়া পর্যন্ত ছাত্র শিবিরের লড়াই চলতেই থাকবে।”
জামায়াত আমির উল্লেখ করেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শান্তিপূর্ণ ও নৈতিক পরিবেশ নিশ্চিত করার মূল দায়িত্ব ইসলামী ছাত্র শিবিরের ওপর বর্তায়। কারণ এই সংগঠনই জাতি গঠনের কারিগর তৈরি করতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
ছাত্র ও শিক্ষকের সম্পর্ককে পিতা-পুত্রের মতো দেখার গুরুত্বে তিনি বলেন, “আমরা চাই কোনো শিক্ষককে অপদস্ত করা হবে না, কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সন্ত্রাসের কেন্দ্র হবে না। অতীতে যারা এসব করেছে, তারা নিন্দিত হয়েছে। ভবিষ্যতে এ ধরনের পুনরাবৃত্তি ছাত্রসমাজ বরদাস্ত করবে না।”
ডা. শফিকুর রহমান আরও বলেন, “ছাত্রদের কাঁধে রয়েছে অসংখ্য শহিদের আত্মত্যাগ ও প্রত্যাশার ভার। এই ভার বহন করার শক্তি আল্লাহ যেন তাদের দান করেন।”
দুর্নীতিমুক্ত শিক্ষা ব্যবস্থার ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, “আমরা চাই এমন একটি শিক্ষা ব্যবস্থা, যা শিক্ষার্থীদের চরিত্রবান, দক্ষ ও আত্মনির্ভরশীল নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলবে। আমরা চাই এমন বাংলাদেশ, যেখানে যুবকরা বেকার থাকবে না; বেকার ভাতা নয়, প্রতিটি হাতে কাজ তুলে দেওয়া হবে।”
তিনি যোগ করেন, “যারা শুধু সংখ্যা গুনে কর্মসংস্থানের কথা বলেন, তাদের কাছে প্রশ্ন; বাকিদের কী হবে? আমরা চাই প্রতিটি যুবক হোক দেশের উন্নয়নের কারিগর।”
ছাত্রদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “তোমরা প্রস্তুত হও। ইনশাআল্লাহ তোমরা পারবে। আমরা তোমাদের সঙ্গে আছি।”
একপর্যায়ে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, “চুল-দাড়ি সাদা দেখে কাউকে ভুল বোঝা ঠিক নয়। মন-মানসে আমরা তরুণদের চেয়ে কম যুবক নই। বিশ্রামের জায়গা এই দুনিয়া নয়; প্রকৃত প্রশান্তি ইনশাআল্লাহ আখিরাতে।”
বক্তৃতার শেষ ভাগে তিনি জামায়াতে ইসলামীসহ সকল ইসলামী সংগঠন ও দেশপ্রেমিক শক্তির উদ্দেশ্যে তিনটি স্পষ্ট বার্তা দেন। তিনি বলেন, দুর্নীতি করা যাবে না এবং কোনো দুর্নীতিবাজকে প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না; সমাজের সব ক্ষেত্রে সমান বিচার নিশ্চিত করতে হবে এবং বিচারব্যবস্থায় রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে; পাশাপাশি জনগণ যে সংস্কারের দিকে তাকিয়ে আছে, সেই সংস্কারের সব সুপারিশ বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করতে হবে।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, “এই তিনটি অঙ্গীকারে যারা একমত, তারা সবাই স্বাগত। আমরা সবাই মিলে সব ধর্ম, সব দল ও সব জাতির অংশগ্রহণে একটি ঐক্যবদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে চাই।”