
মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়েও যে মানুষ হাসিমুখে নিজের বিশ্বাসের কথা বলতে পারেন, ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শহীদ শরিফ ওসমান হাদি তেমনই এক দৃঢ়চেতা ব্যক্তিত্বের উদাহরণ রেখে গেছেন। মৃত্যুর আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত তার একটি আবেগঘন পোস্ট ইতোমধ্যেই ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
১৯ ডিসেম্বর রাত ১১টা ৫৯ মিনিটে ওসমান হাদির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া সেই পোস্টে তিনি তার শেষ ইচ্ছার কথা তুলে ধরেন। পোস্টের সঙ্গে যুক্ত ছিল একটি সাধারণ কফিনের ছবি। সেখানে তিনি লিখেছিলেন, “সাধারণ একটা কফিনে হাসিমুখে আমি আমার আল্লাহর কাছে হাজির হবো।”
পোস্টে নিজের জীবনবোধ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি আরও বলেন, “হারাম খাইয়া আমি এত মোটাতাজা হই নাই, যাতে আমার স্পেশাল কফিন লাগবে! খুবই সাধারণ একটা কফিনে হালাল রক্তের হাসিমুখে আমি আমার আল্লাহর কাছে হাজির হবো।”
মৃত্যুকে তিনি কখনোই ভয়ংকর কিছু হিসেবে দেখেননি বলেও উল্লেখ করেন ওসমান হাদি। তার লেখায় উঠে আসে মৃত্যুর দর্শন ও সংগ্রামের ধারাবাহিকতার কথা। তিনি লিখেছিলেন, “মৃত্যুর ফয়সালা জমিনে নয়, আসমানে হয়। আমি চলে গেলে আমার সন্তান লড়বে, তার সন্তান লড়বে। যুগ হতে যুগান্তরে আজাদের সন্তানরা স্বাধীনতার পতাকা সমুন্নত রাখবেই। মৃত্যুর ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। আমরা তো শাহাদাতের জন্যই মায়ের উদর হতে পৃথিবীতে পা রেখেছি।”
ইনকিলাব মঞ্চের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, শুক্রবার ১৯ ডিসেম্বর শহীদ শরিফ ওসমান হাদির মরদেহ সিঙ্গাপুর থেকে ঢাকায় আনা হচ্ছে। বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে মরদেহটি বিকেল ৩টা ৫০ মিনিটে সিঙ্গাপুর ত্যাগ করবে এবং সন্ধ্যা ৬টা ৫ মিনিটে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছানোর সম্ভাবনা রয়েছে।
ওসমান হাদির এই শেষ বার্তা এবং তার জীবনদর্শন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গভীর আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। নেটিজেনরা তার মানসিক দৃঢ়তা, আত্মত্যাগের মানসিকতা এবং আল্লাহর প্রতি অবিচল বিশ্বাসের উদাহরণ হিসেবে এই বক্তব্যকে প্রশংসা ও শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছেন।