
দীর্ঘ অপেক্ষা ও যন্ত্রণার পর প্রথমবারের মতো কন্যাসন্তানের বাবা হলেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের সদস্য সচিব রবিউল ইসলাম নয়ন। শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এক পোস্টে তিনি বাবা হওয়ার সুখবর জানান।
পোস্টে নয়ন লেখেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহ মহান। আল্লাহ সর্বশক্তিমান। আল্লাহ আমাকে খুশি করেছেন। আমি আজ খুব খুশি। ভীষণ খুশি। কারণ আজ আমি প্রথম সন্তানের বাবা হলাম। আমার প্রিয়তমা স্ত্রী একটি ফুটফুটে কন্যাসন্তানের জন্ম দিয়েছে। আমি তার কাছে কৃতজ্ঞ।’
এই আনন্দঘন মুহূর্তের মাঝেই অতীতের বেদনাদায়ক অভিজ্ঞতার কথাও তুলে ধরেন তিনি। নয়ন লেখেন, ‘আজকের এই আনন্দঘন মুহূর্তে একটি বিষাদের গল্প বলতে চাই। আপনারা জানেন, পতিত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের সময় আমি অনেকবার গ্রেপ্তার হয়েছি। যতবার গ্রেপ্তার করা হয়েছে, ততবার রিমান্ডে নিয়ে অমানবিক নির্যাতন করা হয়েছে। দুই পা উল্টো করে ঝুলিয়ে পিটিয়েছে, বৈদ্যুতিক শক দিয়েছে। এ ছাড়া তিনবার গুলিও করা হয়েছে।’
তিনি আরও লেখেন, ‘সবচেয়ে বেদনাদায়ক ও অসহনীয় যেটা সেটা হচ্ছে—আমার পুরুষাঙ্গে ইট ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে, বৈদ্যুতিক শক দেওয়া হয়েছে। ফলে আমার পুরুষাঙ্গ দিয়ে রক্ত বের হতো এবং একটা পর্যায়ে আমার পুরুষাঙ্গে ইনফেকশন হয়ে যায়। দিনের পর দিন আমি যন্ত্রণায় ছটফট করেছি।’
পোস্টে নয়ন উল্লেখ করেন, ‘বারবার এমন নির্যাতনের ফলে, এবং একটা পর্যায়ে পুরুষাঙ্গে ইনফেকশন হয়ে যাওয়ায় ধীরে ধীরে আমার প্রজননের ক্ষমতা কমে যায়। একটি ফুটফুটে সন্তানের নিষ্পাপ মুখ দেখার তীব্র ইচ্ছায় দিনের পর দিন ডাক্তার দেখিয়েছি কিন্তু ফল পাইনি। আমি আর আমার সহধর্মিণী নীরবে নিভৃতে একে অপরকে জড়িয়ে ধরে কেঁদেছি। বিষয়টি জানার পর আমার নেতা, আমার অভিভাবক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান সাহেব সর্বদা সাহস দিয়েছেন—কোথায় চিকিৎসা করাতে হবে, কোন চিকিৎসক দেখাতে হবে। যেমন একজন পিতা তার সন্তানের প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস পাওয়ার খবর শুনে বিচলিত হন, তিনিও আমার বিষয়টি জানার পর ততটাই বিচলিত হয়ে পড়েন। আমার সন্তান জন্মের খবরে আমি জানি তিনি প্রচণ্ড খুশি হয়েছেন।’
মানসিক যন্ত্রণার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে নয়ন লেখেন, ‘আসলে মানসিক যন্ত্রণা এমন এক কষ্ট, যা বাইরে থেকে বোঝা যায় না, কিন্তু ভেতরটা নিঃশব্দে ভেঙে দেয়। এই যন্ত্রণা চোখের পানি দিয়ে নয়, হৃদয়ের নিঃশ্বাসে প্রকাশ পায়। জীবনে আমরা সবাই কখনো না কখনো এমন মানসিক চাপ ও কষ্টের মুখোমুখি হই, যেটা কারও সাথে ভাগ করে নেওয়া সম্ভব হয় না। কারণ মানসিক কষ্ট হলো এমন এক আগুন, যা ভেতরটা ধীরে ধীরে পুড়িয়ে দেয়, অথচ বাইরে থেকে কেউ টের পায় না। কখনো কখনো এমন একটা সময় আসে, যখন চিৎকার করে কাঁদতেও ইচ্ছে করে না—এই নিঃশব্দ কষ্টটাই মানসিক যন্ত্রণা। যে যন্ত্রণা আমি ভোগ করেছি।’
পোস্টের শেষাংশে তিনি মহান আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে লেখেন, ‘আল্লাহ আমার ফরিয়াদ কবুল করেছেন। আমি সবার কাছে আমার প্রিয় সন্তানের জন্য দোয়া চাই, সেই সাথে মহান রাব্বুল আলামিনের দরবারে হাজারো শুকরিয়া আদায় করছি।’