সংস্কার শেষে আগে স্থানীয় নির্বাচন ও পরে জাতীয় নির্বাচনের দাবি জামায়াতের
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- প্রকাশঃ ০৫:৩৫ পিএম, ৩১ মে ২০২৫

ইসলামি দলগুলো একসঙ্গে নির্বাচনে অংশগ্রহণের আশাবাদ ব্যক্ত করে প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে আগে স্থানীয় নির্বাচন ও পরে জাতীয় নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান।
শনিবার (৩১ মে) দুপুরে গোপালগঞ্জে জামায়াতে ইসলামীর ইউনিট দায়িত্বশীল সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ দাবি জানান।
এসময় তিনি বলেন, হাজার হাজার মানুষের রক্তের বিনিময়ে নতুন বাংলাদেশকে ঢেলে সাজানোর জন্য প্রধান উপদেষ্টা জুন মাসে নির্বাচনের যে ঘোষণা দিয়েছেন তার এক-দুই মাস এদিক-ওদিক হওয়া কোনো বড় ব্যাপার নয়। ব্যাপার হলো সুষ্ঠু নির্বাচন। আওয়ামী লীগ আমলের মতই যদি নির্বাচন হয় তাহলে বাংলাদেশের মানুষ কেন রক্ত দিয়েছে। একজনের পরিবর্তে আরেকজনকে ক্ষমতায় বসানোর জন্য মানুষ জীবন দেয় নাই। মানুষ গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য জীবন দিয়েছে। এজন্য আমরা- প্রয়োজনীয় সংস্কার করে রোজার আগে অথবা পরে নির্বাচন দেওয়ার জন্য বলেছি।
প্রতিবেশী দেশ ভারতকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, আপনারা বিবৃতি দিয়েছেন, সবাইকে নিয়ে ডিসেম্বরের ভেতরে নির্বাচনের। এ দেশে কখন নির্বাচন হবে এটা আপনাদের কোনো বিষয় নয়, কেন আপনারা কথা বলেন। আপনারা এ দেশের ওপর ছড়ি ঘুরিয়ে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র করেছেন বারবার। বাংলাদেশর মানুষ কোনো ষড়যন্ত্র এবং কোনো দেশের প্রভুত্ব মেনে নেবে না।
তিনি আরও বলেন, ফ্যাসিবাদী সরকারের আমলে বিগত ১৬ বছরে সবচেয়ে বেশি জুলম-নির্যাতনের শিকার হয়েছে জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা। হাজার হাজার নেতাকর্মীকে ক্রস ফায়ারের নামে হত্যা করা হয়েছে। গুম করে আয়নাঘরে নিয়ে খুন করা হয়েছে। তারা চেয়েছিল এ দেশ থেকে ইসলামকে নির্মূল করতে।
রফিকুল ইসলাম বলেন, জুলাই বিপ্লাবে ছাত্র-জনতা, কৃষক-শ্রমিক, মেহনতি মানুষ, বাংলাদেশর সব শ্রেণিপেশার মানুষ, দল-মত, জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধের মুখে ফ্যাসিবাদী সরকারের নায়িকা শেখ হাসিনা পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। বাংলাদেশ ফ্যাসিবাদ মুক্ত হয়েছে। দেশের মানুষ দ্বিতীয়বার স্বাধীনতা লাভ করেছে, নতুন বাংলাদেশ পেয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দাবি করে তিনি বলেন, অবিলম্বে শেখ হাসিনা সরকারের চালানো গণহত্যার বিচার করতে হবে। সরকারের ভেতরে ও বাইরে ফ্যাসিবাদের দোসর এখনও যারা আছে। তারা অন্তর্বর্তী সরকার এবং দেশকে অস্থিতিশীল করার সড়যন্ত্রে নিয়োজিত। এই ফ্যাসিবাদ দোসরদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তারের মাধ্যমে বিচারের আওতায় আনতে হবে। এই ফ্যাসিবাদের দোসরদের অনেকেই আরেকটি দলের ঘাড়ে ভর করে এই ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। এটা প্রাশাসন ও সরকার জানে। তাদের চিহ্নিত ও গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানাই।
তিনি বলেন, নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের প্রয়োজনে গণহত্যার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বিচার করতে হবে। তাদের রায় কার্যকর করতে হবে। জাতিসংঘ জুলাই বিপ্লবের গণহত্যার ওপর যে তদন্ত করেছে সেই তদন্ত প্রতিবেদনে পরিষ্কারভাবে তারা বলেছেন, শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের উচ্চপর্যায়ের নেতারা এবং প্রশাসনের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে এ গণহত্যা পরিচালিত হয়েছে।
এ ছাড়াও তিনি বলেন, মিথ্যা মামলা সাজিয়ে জামায়াতের নেতাদের যারা ফাঁসির রায় দিয়ে হত্যা করেছে, এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত বিচারপতি, প্রসিকিউশন, মিথ্যা সাক্ষ্যদাতা সবাইকে গ্রেপ্তার করে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। কারণ- এরা খুনি।
জামায়াতে ইসলামী থেকে হিন্দু প্রার্থী দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, জামায়াত বাংলাদেশের গণমানুষের দল। সুতরাং সবাই যদি জামায়াতের প্রার্থী হয় তাতে কোনো অসুবিধা নেই। প্রার্থী হিন্দু হোক আর মুসলিম হোক- তাকে অবশ্যই সৎ হতে হবে। জামায়েতের কোনো প্রার্থী দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকতে পারবে না।
জামায়াতে ইসলামী গোপালগঞ্জ জেলা শাখার আমির অধ্যাপক রেজাউল করিমের সভাপতিত্বে গোপালগঞ্জ শহরের বিসিক এলাকায় অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন ফরিদপুর জেলা আমির মাওলানা বদরুদ্দীন, সাবেক গোপালগঞ্জ জেলা আমির অ্যাড. আজমল হোসেন সরদার।
অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সাবেক জেলা আমির অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুল হামীদ, জেলা নায়েবে আমির, অধ্যাপক আ. ওয়াহাব মোল্যা, পৌর আমির মাওলানা ইনামুল হক খান, প্রচার সম্পাদক কাজী ইজাহারুল ইসলাম, ফরিদপুরের পৌর আমির এহসানুল মাহাবুব রুবেল প্রমুখ।
জামায়াতে ইসলামী গোপালগঞ্জ জেলা শাখার আয়োজনে অনুষ্ঠিত এ ইউনিট দায়িত্বশীল সম্মেলনে জেলার ৪৫৩টি ইউনিটের সভাপতি ও সেক্রেটারিরা যোগ দেন।