জামায়াতের রাজনীতি নিয়ে আতঙ্ক বাড়ছে: রনি


জামায়াতের রাজনীতি নিয়ে আতঙ্ক বাড়ছে: রনি

বাংলাদেশের রাজনীতিতে জামায়াতে ইসলামীর ক্রমবর্ধমান তৎপরতা ঘিরে উদ্বেগ ছড়াচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্লেষক ও সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মাওলা রনি। তিনি সতর্ক করেছেন, দলের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড, অবস্থান এবং নেতাদের মনোভাব দেখে মনে হচ্ছে তারা আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে ক্ষমতা দখলের ব্যাপারে একরকম নিশ্চিত।

রনি বলেন, ‘জামায়াতের সাম্প্রতিক যে আচরণ, তাদের বডি ল্যাঙ্গুয়েজ, মন-মানসিকতা এবং তাদের কিছু কর্মকাণ্ড এবং কথাবার্তা শুনলে মনে হয় যে তারা ১০০ পারসেন্ট নিশ্চিত। আগামী যে নির্বাচন, সে নির্বাচনের মাধ্যমে তারা ক্ষমতায় চলে আসছে।’

নিজের ইউটিউব চ্যানেলে সম্প্রতি প্রকাশিত এক ভিডিওবার্তায় রনি আরও বলেন, দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে এখন একটি ধারণা দৃঢ়ভাবে জায়গা করে নিচ্ছে যে, সামনে থেকে ড. মুহাম্মদ ইউনূস রাজনীতিতে সক্রিয় থাকলেও, পেছন থেকে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করছে জামায়াতে ইসলামী।

তিনি দাবি করেন, ‘রাষ্ট্রের যত গুরুত্বপূর্ণ পদ এবং পদবী রয়েছে প্রায় সব ক্ষেত্রে জামায়াত বিএনপিকে পরাজিত করে কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ পদ এবং পদবীগুলো তারা নিজেরা দখল করে নিয়েছে।’

রনির ভাষ্য অনুযায়ী, সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রায় প্রতিটি স্তরে জামায়াত তাদের অনুসারীদের বসিয়েছে এবং এর ফলে প্রকৃত ক্ষমতা তাদের হাতেই কেন্দ্রীভূত হচ্ছে। ‘প্রায় সব ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জায়গাগুলোতে চমৎকারভাবে জামায়াত তাদের লোক বসিয়ে পিছন থেকে এমনভাবে ছড়ি ঘুরাচ্ছে, যার ফলে সামনে যারা আছে, উপদেষ্টা হোক বা প্রধান উপদেষ্টা হোক, তাদের আসলে জামায়াতের হুকুমের বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।’

তিনি আরও বলেন, প্রশাসন থেকে শুরু করে রাজনৈতিক পরামর্শ, সচিবালয় থেকে বিচারালয়, এমনকি বিদেশি দূতাবাস পর্যন্ত জামায়াতের প্রভাব বাড়ছে। এ প্রভাবশালী অবস্থান থেকেই তারা বিভিন্ন গোষ্ঠী ও দলের বিরুদ্ধে নিজেদের বক্তব্য ছড়িয়ে দিচ্ছে এবং তা সহজেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে সামাজিক মাধ্যমে।

‘জামায়াত যেটা চাচ্ছে, ওটা ইউটিউবে ট্রেন্ডিং হচ্ছে, ফেসবুকে ভাইরাল হচ্ছে। জামায়াতের যে আমির, এই মুহূর্তে আসলে তিনি এখন সকল ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছেন। দলে দলে লোক তার বাসভবনে যাচ্ছেন। ব্যবসায়ী, আমলা, কূটনীতিবিদ, রাজনীতিবিদ প্রায় সবাই তার সাহায্য প্রত্যাশী।’

রনি তুলনা টেনে বলেন, জামায়াতের শীর্ষ নেতার বাসভবনে যেভাবে ভিড় জমছে, তার সামান্য প্রতিফলনও বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের বাসভবনে দেখা যাচ্ছে না। ‘তবে এর শতভাগের এক ভাগ ভিড় মির্জা ফখরুল, তারেক রহমান বাসায় কিংবা বেগম জিয়ার বাসায় হচ্ছে না। এটা হলো রুঢ় বাস্তবতা।’

জামায়াতের বর্তমান মনোভাব নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন রনি। তার মতে, দলটির মধ্যে এখন এমন এক আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়েছে যে, তারা ক্ষমতায় গেলেই দেশজুড়ে শরিয়াহ আইন চালু করা হবে। নারীদের পোশাক, বিনোদনসহ বহু বিষয়েই কড়া বিধিনিষেধ আরোপের কথা বলছেন তারা।

‘তারা এখন বলছেন, জামায়াত ক্ষমতায় গেলে অবশ্যই শরিয়াহ আইন বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত হবে। হিজাব, বোরখা এবং চোখ-মুখ ঢেকে থাকবেন। তারপরে মেয়েদের যে কর্মকাণ্ড, চিত্ত বিনোদন, গান, বাজনা মানে যেগুলো হাজার বছর ধরে চলে আসছে এমনকি আরবেও চলে আসছিল সেগুলো চলতে পারবে না।’

রনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, জামায়াতপন্থীরা এসব বক্তব্য দিচ্ছেন বাস্তবতা বিবেচনা না করেই। এমন ভাবনা ও মতবাদ জনমানসে আতঙ্ক ও বিরক্তি সৃষ্টি করছে, যা রাজনীতিতে দলটির গ্রহণযোগ্যতা কমাতে পারে। ‘এই জটিল কথাবার্তা যারা বলে আসছেন বা বলে চলছেন, তারা এগুলোর যে পরিণতি কিংবা এগুলোর বাস্তবতা, এগুলো পৃথিবীর কোন দেশে কখনো হয়েছে কিনা এই বিষয়গুলো একটি বারের জন্য চিন্তাভাবনা করেননি। এর মাধ্যমে মানুষের কাছে জামায়াতের রাজনীতিকে রীতিমতো দুর্বিষহ করে তুলছেন।’

ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন [email protected] ঠিকানায়।
×