অচিরেই বাংলাদেশে ভোট
বিশ্বব্যাপী ভোট ব্যবস্থার খুঁটিনাটি
- ফিচার ডেস্ক
- প্রকাশঃ ১২:৩৪ এম, ০৫ এপ্রিল ২০২৫

নেতা নির্বাচন করতে মতামত প্রয়োজন হয়, মতামত প্রদানের অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে ভোট। সংখ্যাগরিষ্ঠের সমর্থন পেলেই রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রী তার আসন পাবেন এটিই স্বাভাবিক। তবে বর্তমান দুনিয়ায় ব্যাপারটি এতটা সহজও না। এই যেমন আমেরিকায়, সেখানে ডোনাল্ড ট্রাম্প তার প্রতিপক্ষের চেয়ে কম সংখ্যক ভোট পেয়েও রাষ্ট্রপতি বনে গেছেন। আবার উত্তর কোরিয়ার মতো দেশেও নিয়মিত ভোট হয়। সবচেয়ে ভালো ভোটিং পদ্ধতি কোনটি, এই প্রশ্নের এখনো সমাধান মেলেনি। বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন নির্বাচন পদ্ধতি রয়ে গেছে। আজকে আমরা জানবো বিভিন্ন দেশের কিছু ভোটিং পদ্ধতির বিভিন্ন জানা অজানা দিক।
মার্বেল দিয়ে ভোট
আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়ায় প্রচলিত আছে মার্বেল দিয়ে ভোট দেওয়া। এই পদ্ধতিটি খুব সাধারণ কিন্তু ভোট কারচুপি করা খুব জটিল। প্রত্যেক প্রার্থীর জন্য আলাদা আলাদা পাত্র থাকবে। ভোটাররা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে চাইলে প্রার্থীর পাত্রে মার্বেল ফেলবে। ভোটারদের আঙ্গুলে অমোচনীয় কালি দিয়ে দেওয়া হবে একাধিক ভোট এড়াতে। দেশটিতে শিক্ষার হার কম থাকায় ১৯৬৫ সালে এ পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণ চালু করে বৃটিশরা। দেশটিতে ২০২১ সালে এ পদ্ধতিতে সফলভাবে ভোটগ্রহণ করা হয়েছিল। দেশটির জনগণ এ পদ্ধতিতে ভোট দিয়েই অভ্যস্ত। তাই আপাতত পরিবর্তন আসার সম্ভাবনাও কম।
ভোট হবে, কিন্তু প্রার্থী একজনই
আরেক অদ্ভুত ভোট পদ্ধতি চালু আছে উত্তর কোরিয়ায়। এখানে ৪-৫ বছর পরপর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এবং ১৮ বছরের উপরে সবার ভোট প্রদান বাধ্যতামূলক। ভোটের দিন সারাদেশে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করে। কিন্তু ঘটনা হচ্ছে, এখানে একমাত্র প্রার্থী কিম জং উন। তার দলের নাম ওয়ার্কারস পার্টি। ভোট তাকেই দিতে হবে। ফলাফল যা হবার তাই হয়, শতভাগ ভোটে পাস করে সুপ্রিম লিডার কিম জং উন। যদিও দেশের পুরো নাম ডেমোক্র্যাটিক পিপলস রিপাবলিক অব কোরিয়া।
মাসব্যাপী ভোট
ভোটগ্রহণ সাধারণত একমাসেই শেষ হয়ে যায়। বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বেশিরভাগ গণতান্ত্রিক দেশই এই নিয়ম অনুসরণ করে। কিছু দেশে দুই/তিন ভাগেও ভোট হয়। কিন্তু দীর্ঘ ৩০/৪০ দিনব্যাপী ভোট শুধু পৃথিবীর একটি দেশেই হয়। সেটি হচ্ছে ভারত যা, পৃথিবীর সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক দেশ। এখানে সে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ভোটগ্রহণকারীরা ছড়িয়ে পরে। দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ, আয়তনে বড় ও অনেক অঞ্চল দূর্গম হওয়ায় এতো সময় লাগে। ২০২৪ সালের নির্বাচনে তাদের সময় লেগেছে ৪৪ দিন। বিষ্ময়কর হলেও সত্য, ১৯৫১-৫২ সালে, প্রথম ভোটগ্রহণ করতে ভারতের সময় লেগেছিল ৪ মাস! ভোটগ্রহণের ক্ষেত্রে ভারতের বিভিন্ন রেকর্ড আছে, যেমন সবচেয়ে উঁচুতে ভোট কেন্দ্র স্থাপন, সবচেয়ে দূরবর্তী স্থানে ভোট কেন্দ্র স্থাপন ইত্যাদি।
পৃথিবীর বাইরে থেকে ভোটপ্রদান
সময় বদলে গেছে, পৃথিবীর মানুষ এখন মহাকাশেও ঘাঁটি গেড়েছে। কিন্তু দেশের নাগরিক হিসেবে তাদেরও তো ভোটপ্রদানের অধিকার আছে। মহাকাশে থেকে ভোটগ্রহণের রেকর্ড একমাত্র আমেরিকার। মার্কিন নভোচারী ডেভিড উলফ, ১৯৯৭ সালে প্রথমবার মহাকাশ থেকে ভোট দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে কেন্ট রুবিনস, উইলমোর ও সবশেষ ২০২৪ নির্বাচনে সুনিতা উইলিয়ামস মহাকাশে থেকে ভোট দিয়েছেন। মহাকাশ থেকে ভোটপ্রদানের মাধ্যম হচ্ছে অনলাইন। তবে উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে এক্ষেত্রে সবধরনের গোপনীয়তা রক্ষা করা হয়।
কন্ঠভোটে প্রেসিডেন্ট
যদিও কন্ঠভোট এখনো বিভিন্ন দেশের সংসদে চালু আছে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার জন্য। কিন্তু একসময় কন্ঠভোটের মাধ্যমে দেশের রাজা পর্যন্ত নির্বাচন করা হতো। কন্ঠভোটের নিয়মটি ছিল এরকম, একটি নির্দিষ্ট স্থানে দেশের সচেতন নাগরিকগণ একত্রিত হতো। এরপর কোন নির্দিষ্ট লোককে রাজা নির্বাচন করা যায় কিনা সে ব্যাপারে প্রশ্ন করা হতো, সমাবেত সবাই উচ্চকণ্ঠে হ্যাঁ অথবা না ভোট দিত। সংখ্যাগরিষ্ঠের কন্ঠের ভোটে রাজা/ প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করা হতো। গ্রিস ও রোমে এইধরনের ভোটিং পদ্ধতি চালু ছিল, অবশ্য তখনকার সময় সেখানে নারীদের ভোটাধিকার ছিল না।
ভোটারদের বয়সের যোগ্যতা
পৃথিবীর প্রায় ৮৫% দেশেই ভোটার হওয়ার সর্বনিম্ন বয়স ১৮ বছর। তবে ব্যাতিক্রম ও আছে, যেমন ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা ও ইকুয়েডর ইত্যাদি ল্যাটিন আমেরিকান দেশে ভোটার হওয়ার সর্বনিম্ন বয়স ১৬ বছর। অন্যদিকে ইন্দোনেশিয়া, উত্তর কোরিয়া, সুদান ও গ্রিসে ভোটার হওয়ার সর্বনিম্ন বয়স ১৭ বছর। আবার কুয়েত, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, লেবানন ও ওমানে ২১ বছর হওয়ার পূর্বে ভোট ভোটার হওয়া যায় না।
লেখক: এ এম এস নিশাত (শিক্ষাক্যাডারে কর্মরত)