
দেশের শীর্ষ দুই সংবাদমাধ্যম প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় জড়িতদের একটি অংশের পরিচয় শনাক্ত করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, এমনটাই জানিয়েছেন ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন। তিনি বলেছেন, অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করে দ্রুত আইনের আওতায় আনতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
রোববার ২১ ডিসেম্বর সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় এক প্রশ্নের জবাবে এসব তথ্য জানান ধর্ম উপদেষ্টা।
ময়মনসিংহ জেলার ভালুকায় এক হিন্দু ধর্মাবলম্বী পোশাক শ্রমিককে ধর্ম নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে দলবদ্ধভাবে পিটিয়ে ও আগুনে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমি ধর্ম উপদেষ্টা হিসেবে এর জন্য দুঃখ প্রকাশ করছি এবং এটা অত্যন্ত নিন্দনীয়, গর্হিত কাজ। আমরা কোনোক্রমে আইন হাতে নিতে দেব না। আইন হাতে নেওয়াটা একটা রাষ্ট্রের সুষ্ঠু পরিচালনার ক্ষেত্রে বড়ো বাধা এবং আমি আজ সকালেই স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কাছে একটা মেসেজ পাঠিয়েছি এবং অ্যাডভাইজার গ্রুপেও কপি দিয়েছি যে, আমরা মব জাস্টিস অ্যালাউ করবো ন। যে বা যারা এই মানুষটাকে পিটিয়ে মেরেছে এবং আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছে তাদেরকে অভিলম্বে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার জন্য আমি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে অনুরোধ করেছি।”
মব জাস্টিস নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা নিয়ে প্রশ্ন তুললে উপদেষ্টা বলেন, সরকার এ ধরনের সহিংসতা দমনে অব্যাহত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, সব জায়গায় আগাম পুলিশ মোতায়েন করা বাস্তবসম্মতভাবে কঠিন এবং অনেক সময় কোথায় হামলা হবে তা আগে থেকে জানা যায় না। এ কারণে সরকার ধারাবাহিকভাবে এ ধরনের কর্মকাণ্ড নিরুৎসাহিত করছে।
প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারে আগুন দেওয়ার ঘটনা প্রসঙ্গে তিনি আরও জানান, “প্রথম আলো এবং ডেইলি স্টারে যারা আগুন দিয়েছে আমি গোয়েন্দা রিপোর্ট থেকে জানতে পেরেছি, তাদের কিছু ছবি, তাদের কিছু পরিচয় আমরা এরইমধ্যে শনাক্ত করেছি। তাদেরকেও গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার জন্য আমরা ব্যবস্থা করেছি।”
ছায়ানটে হামলা এবং ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলের বক্তব্য নিয়ে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কে কী মন্তব্য করল তা সরকারের নিয়ন্ত্রণে নয়। তবে সরকার অনুমোদিত বা চলমান কোনো প্রতিষ্ঠানে হামলা কিংবা মানুষ পুড়িয়ে হত্যার ঘটনা সরকার কখনোই গ্রহণযোগ্য মনে করে না। তিনি বলেন, এসব কর্মকাণ্ড সরকার অন্যায় ও গর্হিত কাজ হিসেবে বিবেচনা করে এবং দায়ীদের আইনের আওতায় আনতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও নির্বাচন নিয়ে আরেক প্রশ্নের জবাবে ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, বর্তমানে পরিস্থিতি সরকারের নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে। কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটলেও সরকার আশাবাদী যে নির্ধারিত সময়েই সুষ্ঠু, অবাধ, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও স্বতঃস্ফূর্ত নির্বাচনের আয়োজন সম্ভব হবে এবং সেই পরিবেশ এখনো বজায় আছে।
একই রাতে প্রথম আলো, ডেইলি স্টার, ছায়ানটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে হামলার ঘটনায় গোয়েন্দা ব্যর্থতা ছিল কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টিকে সরাসরি গোয়েন্দা ব্যর্থতা বলা সমীচীন নয়। এ প্রসঙ্গে তিনি জানান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়টি দেখছে এবং একসঙ্গে বিভিন্ন স্থানে হামলার পরিকল্পনা আগেভাগে জানা সব সময় সম্ভব হয় না। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, কাজী নজরুল ইসলামের মাজারের পাশে দাফনকালে সম্ভাব্য ঝুঁকি সম্পর্কে গোয়েন্দা তথ্য পাওয়ার পর দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ায় সেখানে কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি।
একই সময় একাধিক স্থানে হামলা এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে জনমনে সন্দেহ প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, সরকার স্থিতিশীলতা চায়। তিনি বলেন, “সরকারতো স্থিতিশীলতা চায়। এখন যদি মব বারে বারে হয় এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যদি অবনতি ঘটে, এটা নিঃসন্দেহে গভর্নমেন্টের ব্যর্থতা বলে চিহ্নিত হবে। গভর্নমেন্ট করতে যাবে কেন? গর্ভমেন্ট তো প্রিভেন্ট করতে চায়। গর্ভমেন্ট আইনশৃঙ্খলাকে উন্নত করতে চায় এবং নির্বাচনের যে পরিবেশটা আছে এটা যাতে আরো সুষ্ঠু হয়। গর্ভমেন্ট তো এ ব্যাপারে সক্রিয়। সরকারি মদতে হবে এ কথাটা তো সঠিক নয়।”
বিদেশ থেকে উসকানির অভিযোগ নিয়ে তিনি বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিদেশি মন্তব্য বা বক্তব্য বাংলাদেশ সরকারের সরাসরি নিয়ন্ত্রণে নেই। মেটা বা ইউটিউবের মতো প্ল্যাটফর্মগুলোর নিজস্ব কর্তৃপক্ষ রয়েছে এবং উন্মুক্ত প্ল্যাটফর্মে যেকেউ মত প্রকাশ করতে পারে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ থেকেও প্রতিদিন নানা ধরনের মন্তব্য ও সমালোচনা করা হয়, যা সরকার সরাসরি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না।