
বিজয়ের মাসে জাতি হারাল মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম প্রধান বীর সেনানী এ কে খন্দকার বীর উত্তমকে। স্বাধীনতার লড়াইয়ে নেতৃত্ব দেওয়া এই কৃতী মুক্তিযোদ্ধা বার্ধক্যজনিত কারণে ইন্তেকাল করেছেন।
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানিয়েছে, শনিবার (২০ ডিসেম্বর) সকাল ১০টা ৩৫ মিনিটে তিনি শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহ ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৫ বছর।
মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিবাহিনীর উপপ্রধান (ডেপুটি চিফ অব স্টাফ) হিসেবে দায়িত্ব পালন করা এ কে খন্দকার স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর প্রথম প্রধান নিযুক্ত হন। সাবেক এই এয়ার ভাইস মার্শাল পরবর্তী সময়ে রাজনীতিতে যুক্ত হয়ে দুই দফায় মন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেন।
এ কে খন্দকারের জন্ম ১৯৩০ সালে রংপুরে, যেখানে তখন তাঁর বাবা কর্মরত ছিলেন। তাঁর পৈতৃক নিবাস পাবনা জেলার বেড়া উপজেলার পুরান ভারেঙ্গা গ্রামে। তিনি ১৯৪৭ সালে ম্যাট্রিকুলেশন এবং ১৯৪৯ সালে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৫২ সালে পাকিস্তান বিমানবাহিনীতে কমিশন লাভ করেন তিনি।
গ্রুপ ক্যাপ্টেন পদে থাকা অবস্থায় তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন এবং মুক্তিবাহিনীর ডেপুটি চিফ অব স্টাফ হিসেবে নিয়োগ পান। মুক্তিযুদ্ধ শুরুর ঠিক আগে তিনি পূর্ব পাকিস্তানে পাকিস্তান বিমানবাহিনীর দ্বিতীয় প্রধানের দায়িত্বে ছিলেন। সেখান থেকে বেরিয়ে এসে তিনি স্বাধীনতার যুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন।
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের ঐতিহাসিক মুহূর্তে মুক্তিবাহিনীর প্রতিনিধি হিসেবেও এ কে খন্দকার উপস্থিত ছিলেন। স্বাধীনতার পর তাঁকে প্রথম বিমানবাহিনী প্রধান হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। তাঁর নেতৃত্বেই যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ বিমানবাহিনী পুনর্গঠিত হয়। তিনি ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত এ পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন।
মহান মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ এ কে খন্দকারকে ১৯৭৩ সালে ‘বীর উত্তম’ খেতাবে ভূষিত করা হয়। পরে ২০১১ সালে তিনি স্বাধীনতা স্বাধীনতা পদক লাভ করেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা রক্ষায় তিনি সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের সভাপতির দায়িত্বও পালন করেছেন।
রাজনৈতিক জীবনে তিনি প্রথমবার মন্ত্রীর দায়িত্ব পান এইচ এম এরশাদের সরকারের সময়ে। পরে ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে আবারও মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত হন।
মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তাঁর লেখা গ্রন্থ ‘১৯৭১: ভেতরে বাইরে’ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসে একটি আলোচিত ও গুরুত্বপূর্ণ বই হিসেবে বিবেচিত।