
তিন দফা দাবিতে রাজধানীতে টানা অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সঙ্গে আজ রবিবার সন্ধ্যার পর আলোচনায় বসছে সরকার। সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে অংশ নেবেন অর্থ মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. শামছুদ্দিন মাসুদ।
এর আগে শনিবার (৮ নভেম্বর) বিকেলে শাহবাগে পদযাত্রা কর্মসূচির সময় আন্দোলনরত শিক্ষকদের ওপর পুলিশ লাঠিচার্জ, কাঁদানে গ্যাস, জলকামান ও সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করে। এতে দেড় শতাধিক শিক্ষক আহত হন। এ ঘটনার প্রতিবাদে শিক্ষকরা আজ রবিবার থেকে সারাদেশে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতির ঘোষণা দেন।
শনিবার সন্ধ্যায় প্রাথমিক শিক্ষক দশম গ্রেড দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক ও বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি শামছুদ্দিন মাসুদ বলেন, “দশম গ্রেডসহ তিন দফা দাবি বাস্তবায়ন ও শিক্ষকদের ওপর হামলার প্রতিবাদে রোববার থেকে সারাদেশে পূর্ণদিবস কর্মবিরতি চলবে।”
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৬৫ হাজার ৫৬৯টি। এসব বিদ্যালয়ে তিন লাখ ৮৪ হাজারেরও বেশি শিক্ষক কর্মরত রয়েছেন, আর শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রায় এক কোটি ৪০ লাখ।
সহকারী শিক্ষকদের মূল তিন দাবি হলো— দশম গ্রেডে বেতন নির্ধারণ, চাকরির ১০ ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড জটিলতার সমাধান, এবং শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতির বাস্তবায়ন।
গত ২৪ এপ্রিল প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রধান শিক্ষকদের বেতন ১১তম থেকে ১০ম গ্রেডে এবং ১৩তম গ্রেডে থাকা শিক্ষকদের বেতন ১২তম গ্রেডে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত নেয়। তবে এই সিদ্ধান্তে অসন্তুষ্ট সহকারী শিক্ষকরা।
এ বিষয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ শামছুদ্দিন মাসুদ বলেন, “বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা, নার্স, কৃষি কর্মকর্তা, পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর, এমনকি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা স্নাতক ডিগ্রি নিয়েই দশম গ্রেডে বেতন পাচ্ছেন। অথচ আমরা স্নাতক ডিগ্রির পাশাপাশি সিএনএড, বিপিএড ও বিটিপিটি কোর্স সম্পন্ন করেও ১৩তম গ্রেডে রয়েছি। এটি বৈষম্য। তাই ন্যায্য দাবি আদায়ে আন্দোলন করতে বাধ্য হয়েছি।”
অন্যদিকে, প্রাথমিক সহকারী শিক্ষকদের আরেকটি অংশ “প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদ”-এর ব্যানারে সরকারের কাছে সময়সীমা দিয়েছে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত। তাদের দাবি— একাদশ গ্রেডে বেতন নির্ধারণ, উচ্চতর গ্রেড জটিলতা নিরসন এবং শতভাগ পদোন্নতির বাস্তবায়ন।
দাবি না মানা হলে তারা ২৩ ও ২৪ নভেম্বর অর্ধদিবস কর্মবিরতি, ২৫ ও ২৬ নভেম্বর পূর্ণদিবস কর্মবিরতি এবং ২৭ নভেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে।