
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আটক সেনা কর্মকর্তাদের পক্ষে আর আইনজীবী হিসেবে কাজ করবেন না ব্যারিস্টার এম সারওয়ার হোসেন। রোববার (৯ নভেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ তিনি নিজের নাম প্রত্যাহারের আবেদন করেন, যা আদালত গ্রহণ করেছে বলে জানিয়েছেন তিনি নিজেই।
আদালত প্রাঙ্গণ থেকে বেরিয়ে ব্যারিস্টার সরোয়ার হোসেন বলেন, “১৫ জন সেনা কর্মকর্তার পক্ষে আমরা পাঁচজন আইনজীবী ২২ অক্টোবর ওকালতনামা জমা দিয়েছিলাম। পরে জানতে পারি, আমি নিজেই একটি অভিযোগ করেছিলাম এবং সেই অভিযোগের আসামিরা এই মামলারই আসামি।”
তিনি আরও বলেন, “প্রফেশনাল এথিক্স অ্যান্ড কনডাক্ট অনুযায়ী আমি এই মামলায় ডিফেন্স আইনজীবী হতে পারি না। তাই সেই নৈতিকতা ও আইসিটি বিধির আলোকে আজ আবেদন করেছি, যা ট্রাইব্যুনাল গ্রহণ করেছেন।”
তিনটি মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার মধ্যে দুটি ঘটেছে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়, যেখানে গুম ও নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে। অন্য মামলা রাজধানীর রামপুরা ও বনশ্রী এলাকায় জুলাই মাসের গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত অপরাধসংক্রান্ত। এই তিন মামলায় সাবেক ও বর্তমান ২৫ জন সেনা কর্মকর্তাসহ মোট ৩২ জন আসামি আছেন। এর মধ্যে ১৫ সেনা কর্মকর্তা বর্তমানে ঢাকা সেনানিবাসের সাব-জেলে আটক রয়েছেন।
গুম ও নির্যাতনের অভিযোগে দায়ের করা মামলাগুলোর একটিতে আসামি ১৭ জন। তাদের মধ্যে র্যাবের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. কামরুল হাসান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহাবুব আলম, ব্রিগেডিয়ার কে এম আজাদ, কর্নেল আবদুল্লাহ আল মোমেন, কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান (বর্তমানে অবসরকালীন ছুটিতে), র্যাবের গোয়েন্দা শাখার সাবেক পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মশিউর রহমান, লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাইফুল ইসলাম সুমন এবং লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. সারওয়ার বিন কাশেম বর্তমানে কারাগারে আছেন।
এ মামলার আসামিদের মধ্যে র্যাবের সাবেক তিন মহাপরিচালকও রয়েছেন: বেনজীর আহমেদ (পরবর্তীতে আইজিপি), এম খুরশিদ হোসেন এবং মো. হারুন-অর-রশিদ। তারা বর্তমানে পলাতক। পলাতক আসামিদের তালিকায় আরও আছেন শেখ হাসিনা, সাবেক প্রতিরক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এবং র্যাবের সাবেক পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মুহাম্মাদ খায়রুল ইসলাম।
অন্যদিকে, জুলাই মাসের গণ-অভ্যুত্থানের সময় রাজধানীর রামপুরা ও বনশ্রী এলাকায় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আসামি করা হয়েছে বিজিবির সাবেক কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ রেদোয়ানুল ইসলাম, মেজর মো. রাফাত-বিন-আলম, পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত উপকমিশনার মো. রাশেদুল ইসলাম এবং সাবেক ওসি মো. মশিউর রহমানকে। এর মধ্যে রেদোয়ানুল ও রাফাত সেনানিবাসের সাব-জেলে আটক আছেন, আর বাকি দুইজন পলাতক।