
সৌদি আরবে চলতি বছরে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের সংখ্যা অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। এতে টানা দ্বিতীয় বছর দেশের ইতিহাসে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের হার সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো এই পরিস্থিতিকে ‘রক্তক্ষয়ী সময়’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা রিপ্রাইভের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালে এখন পর্যন্ত সৌদি আরবে অন্তত ৩৪৭ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। ২০২৪ সালে এই সংখ্যা ছিল ৩৪৫।
চলতি বছরে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে প্রায় দুই-তৃতীয়াংশই মাদকসংক্রান্ত অপরাধে অভিযুক্ত ছিলেন। জাতিসংঘ এমন শাস্তিকে আন্তর্জাতিক আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হিসেবে দেখেছে। এছাড়া মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের অর্ধেকের বেশি বিদেশি নাগরিক, যার মধ্যে পাকিস্তান, মিসর ও জর্ডানের নাগরিক রয়েছেন।
বিবিসির মন্তব্যের অনুরোধে সৌদি কর্তৃপক্ষ কোনো প্রতিক্রিয়া দেননি।
মানবাধিকার সংস্থাগুলো অভিযোগ করছে, সৌদি আরবে বিচার প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে। রিপ্রাইভের মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা অঞ্চলের প্রধান জিদ বাসিউনি বলেন, “সৌদি আরব এখন ‘ধরাকে সরা জ্ঞান’ করছে। তারা কার্যত আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ব্যবস্থাকে উপহাস করছে।” তিনি আরও বলেন, দেশটিতে নির্যাতনের মাধ্যমে জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি আদায় করা একটি সাধারণ ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এ বছর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে একজন সাংবাদিক ও দুজন যুবক রয়েছেন, যারা গ্রেপ্তারের সময় অপ্রাপ্তবয়স্ক ছিলেন। শিয়া সম্প্রদায়ের হয়ে বিক্ষোভে অংশ নেওয়ায় আবদুল্লাহ আল-দরাজি ও জালাল আল-লাব্বাদ নামে এই দুই যুবককে সন্ত্রাসবাদের অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। এছাড়া জুনে সাংবাদিক তুর্কি আল-জাসিরকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। ইউনেসকো এই ঘটনা গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর সরাসরি আঘাত হিসেবে দেখছে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) সৌদি আরবে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের এই রেকর্ডকে ‘ভয়াবহ’ হিসেবে বর্ণনা করেছে। সংস্থাটির গবেষক জোয়ি শেয়া বলেন, আন্তর্জাতিক ক্রীড়া ও বিনোদন অনুষ্ঠান আয়োজনের মাধ্যমে সৌদি কর্তৃপক্ষ তাদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা আড়াল করার চেষ্টা করছে।
এদিকে বিচারবহির্ভূত হত্যার বিষয়ে জাতিসংঘের বিশেষ দূত মরিস টিডবল-বিঞ্জ সৌদি আরবে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের অবিলম্বে স্থগিতের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “বিচারপ্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা এবং দণ্ড কার্যকর করার আগে পরিবারকে যথাযথভাবে অবহিত করা জরুরি।”