‘জুয়াড়ি ট্রাম্প, আপনি যুদ্ধ শুরু করতে পারেন কিন্তু শেষ করব আমরা’


lsgh89erg897.jpg

যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক বোমা হামলায় ইরানের গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে। এরই মধ্যে ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধ প্রবেশ করেছে ১১তম দিনে। একদিকে ইসরায়েল নতুন করে ইরানের রাজধানীসহ একাধিক সামরিক স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে, অন্যদিকে ইরানের সামরিক শীর্ষ কর্মকর্তারা যুক্তরাষ্ট্রকে ‘মারাত্মক ফলের’ হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক হামলার পর ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তা জেনারেল আবদুর রহিম মুসাভি যুক্তরাষ্ট্রকে এক কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ‘আমরা কখনোই পিছিয়ে যাব না।

সোমবার ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর চিফ অব স্টাফ মেজর জেনারেল মুসাভি বলেন, ‘অপরাধী আমেরিকা ইসলামের যোদ্ধাদের সামনে যুদ্ধের দরজা খুলে দিয়েছে। তারা ইরানের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করে আমাদের পবিত্র ভূমিতে হস্তক্ষেপ করেছে। এর জবাবে আমাদের সশস্ত্র বাহিনী যেকোনো সময় প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত এবং আমরা এক ইঞ্চিও পিছু হটব না।’

এই বার্তাটি সোমবার ইরানের সামরিক নেতৃত্বের একাধিক হুঁশিয়ারির সর্বশেষ সংযোজন।

যদিও এখনো পর্যন্ত ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের হামলা নিয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া আসেনি।

‘গ্যাম্বলার ট্রাম্প, আপনি যুদ্ধ শুরু করতে পারেন—শেষ করব আমরা’

সশস্ত্র বাহিনীর কেন্দ্রীয় কমান্ডের মুখপাত্র ইব্রাহিম জোলফাকারি রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রচারিত এক ভিডিও বার্তায় আরও হুঁশিয়ার করে বলেন, ‘আমাদের প্রতিক্রিয়া হবে শক্তিশালী, নির্ভুল এবং ভয়ানক। এতে শত্রু কেবল অনুতপ্তই হবে না, বরং এমন ফল ভোগ করবে যা তারা কল্পনাও করতে পারবে না।’

এরপর ইংরেজিতে বলেন, ‘গ্যাম্বলার ট্রাম্প, তুমি এই যুদ্ধ শুরু করতে পারো, কিন্তু শেষ করব আমরা।’ এই বার্তা রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা ফারস ও মেহর দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়।

এই হুঁশিয়ারিগুলো এমন এক সময় এসেছে, যখন যুক্তরাষ্ট্র ইরানের ভূখণ্ডে সরাসরি হামলা চালিয়ে একাধিক পারমাণবিক স্থাপনা ও সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানে। তীব্র প্রতিক্রিয়ায় মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা পরিস্থিতি আরো জটিল হয়ে উঠেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরানের এই বক্তব্য শুধু হুমকি নয়, বরং অঞ্চলের ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার জন্য একটি স্পষ্ট বার্তা।

এখন সবার দৃষ্টি খামেনির দিকেই, যিনি সিদ্ধান্ত নেবেন, ইরান এই উত্তেজনা মোকাবিলায় কোন পথে এগোবে—পূর্ণ প্রতিশোধ নাকি কৌশলগত সংযম।

সর্বশেষ যা যা ঘটল

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, প্রায় ২০টি ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান গতকাল রবিবার রাতে ইরানের পশ্চিমাঞ্চলের কেরমানশাহ শহর ও রাজধানী তেহরানে একযোগে হামলা চালায়। লক্ষ্য ছিল ক্ষেপণাস্ত্র মজুদ ও উৎক্ষেপণ কেন্দ্র, স্যাটেলাইট নেটওয়ার্ক এবং সামরিক রাডার ঘাঁটি।

আইডিএফ-এর বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ইসরায়েলের ভূখণ্ড লক্ষ্য করে প্রস্তুত করা বেশ কিছু ভূমি থেকে ভূমিতে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ ও সংরক্ষণ কেন্দ্র গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।’ এ ছাড়াও, ইরানের ছয়টি বিমানবন্দরেও হামলা চালানো হয়েছে, যেখানে ১৫টি যুদ্ধবিমান ও হেলিকপ্টার ধ্বংস করার দাবি করেছে ইসরায়েল।

ইরানের পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা

সোমবার ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানায়, ইরান থেকে নতুন করে একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র ছোঁড়া হয়েছে। ফলে তেল আবিব ও জেরুজালেমসহ ইসরায়েলের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলে সতর্কতা সাইরেন বাজানো হয়। রাতভর ছোঁড়া একটি ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দ্বারা সফলভাবে প্রতিহত করা হয়েছে বলে জানায় আইডিএফ।

তেলের বাজারে উত্তেজনা

এখনও পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী তেল সরবরাহে বড় কোনো বিঘ্ন না ঘটলেও, হামলার পর বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। ফলে তেলের দাম এক লাফে প্রায় ১০শতাংশ বেড়ে গেছে। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, ইরান হরমুজ প্রণালীতে জাহাজ চলাচলে বাধা দিলে বৈশ্বিক জ্বালানি বাজারে বিশৃঙ্খলা তৈরি হতে পারে। উল্লেখ্য, হরমুজ প্রণালী দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ২০ মিলিয়ন ব্যারেল তেল, যা বিশ্ব সরবরাহের প্রায় ২০ শতাংশ, পরিবাহিত হয়।

রাশিয়ার সঙ্গে ইরানের কৌশলগত বৈঠক

এই উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি গতকাল রবিবার মস্কো পৌঁছেছেন এবং সোমবার তিনি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করবেন বলে জানিয়েছেন। বৈঠকে ইরান-রাশিয়ার  হুমকি ও প্রতিরক্ষা কৌশল নিয়ে আলোচনা হবে বলে জানান তিনি।

এর আগে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যুক্তরাষ্ট্রের হামলার কড়া সমালোচনা করে বলেছে, ‘এটি একেবারে দায়িত্বজ্ঞানহীন একটি সিদ্ধান্ত এবং আন্তর্জাতিক আইনের সরাসরি লঙ্ঘন।’

উল্লেখ্য, জানুয়ারিতে রাশিয়া ও ইরান একটি ‘বিস্তৃত কৌশলগত অংশীদারিত্ব চুক্তি’ সই করেছে, যার মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সামরিক ও রাজনৈতিক সম্পর্কের ভিত্তি তৈরি হয়। সার্বিকভাবে, ইরান-ইসরায়েল সংঘাত এখন একটি বহুমুখী যুদ্ধের রূপ নিচ্ছে, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়াও সরাসরি জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনায় আন্তর্জাতিক উদ্বেগ বাড়ছে। ইরান কেমন প্রতিক্রিয়া দেখাবে, সেটিই এখন পুরো অঞ্চলের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

এদিকে মার্কিন নাগরিকদের জন্য বিশ্বব্যাপী সতর্কতা জারি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ইরানে মার্কিন হামলার পর দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তরের পক্ষ থেকে এই সতর্কতা জারি করা হয়। ইরানের বড় ধরনের এই হামলার পরই ইসরায়েলে ব্যাপক বিদ্যুৎ বিভ্রাট দেখা দিয়েছে। এর জেরে ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলের বেশ কিছু শহরে বিদ্যুৎ পরিষেবা ব্যাহত হয়েছে।

সূত্র : সিএনএন

ঢাকাওয়াচ২৪ এর খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন ।
ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন [email protected] ঠিকানায়।
×