করোনার মতো মহামারির শঙ্কা


November 16/Virus2_20250104_214621398.jpg

প্রায় পাঁচ বছর আগে চীনের উহানে যখন প্রথম একটি ভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়, তখন কেউ কল্পনাও করেনি কোভিড-১৯ কিংবা করোনা নামক এই ভাইরাসটি গোটা পৃথিবীকে গ্রাস করবে। সেই ভাইরাসে এক কোটির বেশি মানুষের মৃত্যু দেখেছে বিশ্ব। কোভিডে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর মুখ থেকে বেঁচে ফেরা মানুষের সংখ্যাও কোটি কোটি। করোনা মহামারিতে স্থবির হয়ে পড়েছিল গোটা বিশ্ব।

সেই ধাক্কা এখনো পুরোপুরি সামলে ওঠার আগেই আরেকটি ভাইরাসের মুখোমুখি বিশ্ব। এইচএমপিভি নামক ভাইরাসটির উৎপত্তিও চীনে। এটি করোনা ভাইরাসের মতো মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এতে দেশে দেশে ছড়িয়ে পড়েছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা।

বিশেষজ্ঞদের শঙ্কা, ২০২৫ সালে আবার করোনার মতো নতুন কোনো মহামারির উদ্ভব হতে পারে। যদিও কোন রোগটি মহামারি আকার ধারণ করবে, সে বিষয়ে স্পষ্ট কোনো বার্তা এখনই দেওয়া সম্ভব নয়। তবে এইচএমপিভির প্রাদুর্ভাব ভাবাচ্ছে তাদের।

চীনে নতুন ভাইরাসের হানার কথা শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) থেকে ছড়িয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে। এর নেপথ্য কারণ অবশ্য সামাজিক যোগাযোগা মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একাধিক ভিডিও। সেই ভিডিওগুলোতে দেখা গিয়েছে, চীনের বিভিন্ন হাসপাতালে রোগীদের ভিড়। মুখে মাস্ক পরে চিন্তিত মুখে বসে রয়েছেন রোগীর পরিবারের সদস্য এবং আত্মীয়-পরিজন। রোগীরা শুয়ে রয়েছেন বিছানায়।

সেই ভিডিওগুলোতে দাবি করা হয়েছে, রোগীদের প্রায় প্রত্যেকেই হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস (এইচএমপিভি)-এ আক্রান্ত। যদিও সেই ভিডিওগুলোর সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি। চীনও স্পষ্ট করেছে, এইচএমপিভি নিয়ে চিন্তার মতো কিছু নেই। দেশটির সরকার পুরো বিষয়টিকে ‘শীতকালীন সংক্রমণ’ বলে ব্যাখ্যা করেছে। দায়ী করেছে মৌসুমকেই। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও পর্যটক এবং নাগরিকদের আশ্বস্ত করে বলেছে, সে দেশে ভ্রমণ সম্পূর্ণভাবে নিরাপদ।

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র মাও নিং জানিয়েছেন, নতুন ভাইরাসের সংক্রমণ বাড়লেও বিষয়টি নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার প্রয়োজন নেই। তার কথায়, ‘শীতের মৌসুমে শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণের প্রবণতা খুব বেশি। আমি আপনাকে আশ্বস্ত করতে পারি যে, সরকার চীনে আগত বিদেশিদের স্বাস্থ্য নিয়ে যত্নশীল।’

নয়া ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সম্প্রতি চীনের হাসপাতালগুলোতে রোগীদের ভিড়ের যে ছবি এবং ভিডিও ভাইরাল হয়েছে, সেই প্রসঙ্গেও মুখ খুলেছেন তিনি। তার দাবি, ভাইরাস মারাত্মক নয়। সংক্রমণের হারও গত বছরের তুলনায় কম।

এইচএমপিভির সংক্রমণ নতুন নয়। সেই ভাইরাস প্রথম শনাক্ত করা হয়েছিল প্রায় দুই দশক আগে, ২০০১ সালে। এইচএমপিভি-র সংক্রমণ নিয়ে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন ভারতের ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ হেল্‌থ সার্ভিসেস (ডিজিএইচএস)-এর কর্মকর্তা অতুল গয়াল। শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ প্রতিরোধে সাধারণ সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। ভারতের হাসপাতালগুলো এই ধরনের ভাইরাসের সংক্রমণ মোকাবিলা করতে প্রস্তুত বলেও জানান তিনি।

ভারতীয় চিকিৎসকেরাও বিষয়টি নিয়ে এখনই মাথাব্যথার কিছু দেখছেন না। বিশেষজ্ঞদের মতে, মেটানিউমোভাইরাস নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার দরকার নেই। এটির সংক্রমণ কোভিডের মতো ছড়াবে, এমন ভেবে আতঙ্কিত হওয়ারও কারণ নেই।

নেদারল্যান্ডসের বিশেষজ্ঞেরা ২০০১ সালে শিশুদের শ্বাসযন্ত্রে প্রথম এই ভাইরাসের নমুনা শনাক্ত করেন। তারপর ২৪ বছর কেটে গিয়েছে। তবে সেই ভাইরাসের কোনো টিকা তৈরি হয়নি।

অন্যদিকে, সেরোলজিক্যাল গবেষণায় দেখা গিয়েছে, মেটানিউমোভাইরাস কমপক্ষে ৬০ বছর ধরে পৃথিবীর বুকে বিদ্যমান এবং সাধারণ শ্বাসযন্ত্রের প্যাথোজেন হিসেবে সারা বিশ্বে ছড়িয়েছে। মূলত শীতকালে এর সংক্রমণ লক্ষ্য করা যায়।

মেটানিউমোভাইরাসের উপসর্গের মধ্যে রয়েছে জ্বর, সর্দি এবং কাশি। খুব কমসংখ্যক রোগী নিউমোনিয়াতেও আক্রান্ত হতে পারেন। মৃত্যুর হারও নগণ্য।

আমেরিকার বেসরকারি সংস্থা ‘ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক’ জানিয়েছে, মেটানিউমোভাইরাসের চিকিৎসা হয় এমন কোনো ‘অ্যান্টিভাইরাল’ ওষুধ নেই। ‘চাইনিজ় সেন্টার ফর ডিজ়িজ় কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন’ও তাদের ওয়েবসাইটে সেই ভাইরাসের কোনো টিকার কথা উল্লেখ করেনি।

এইচএমপিভি আক্রান্ত কোনো ব্যক্তি বা শিশু গুরুতর অসুস্থ হলে তাদের হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন হতে পারে। চিকিৎসাকেন্দ্রে রোগীর অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে তার শুশ্রূষা করা হয়। চিকিৎসার জন্য অক্সিজেন, কর্টিকোস্টেরয়েড ব্যবহার করা যেতে পারে।

বিশেষজ্ঞেরা জানিয়েছেন, সংক্রামিত ব্যক্তির নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা উচিত এবং ভিড় জায়গায় মাস্ক পরে থাকা উচিত। এছাড়াও, সংক্রমণ থেকে বাঁচতে ঘন ঘন হাত ধোয়া আবশ্যক। জীবাণুমুক্তকরণের দিকেও বিশেষ নজর থাকা উচিত।

চিকিৎসকেরা বলছেন, করোনা মোকাবিলায় যেসব সতর্কতা নেওয়া হয়েছিল, একই পদক্ষেপে এই ভাইরাসও প্রতিরোধ করা সম্ভব। টানা ২০ সেকেন্ড ধরে সাবান ও পানি দিয়ে হাত ধোয়া, অপরিষ্কার হাতে নাক-মুখ স্পর্শ না করা এবং আক্রান্ত ব্যক্তিদের থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখার মধ্য দিয়ে এইচএমপিভি থেকে নিরাপদ থাকার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

ঢাকাওয়াচ২৪ এর খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন ।
ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন [email protected] ঠিকানায়।
×