.png)
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড থেকে প্রায় ১০ হাজার ৪৭৯ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও বিদেশে পাচারের অভিযোগে এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলমসহ ৬৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে।
রোববার (৯ নভেম্বর) দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে এ মামলার সিদ্ধান্তের কথা নিশ্চিত করেছেন সংস্থার সহকারী পরিচালক (জনসংযোগ) মো. তানজির আহমেদ। দুদক জানিয়েছে, এটি সংস্থার ইতিহাসে সর্ববৃহৎ দুর্নীতির মামলা।
দুদকের তদন্তে উঠে এসেছে, এস আলম গ্রুপের তিনটি প্রতিষ্ঠান—এস আলম রিফাইনড সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, এস আলম স্টিলস লিমিটেড ও এস আলম ট্রেডিং কোম্পানি লিমিটেড—ঋণের নামে ইসলামী ব্যাংক থেকে ৯ হাজার ২৮৩.৯৩ কোটি টাকা নেওয়া হয়, যা লভ্যাংশসহ বর্তমানে ১০ হাজার ৪৭৯.৬২ কোটি টাকায় পৌঁছেছে।
মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, এই ঋণ জালিয়াতি, প্রতারণা ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে আত্মসাত করা হয় এবং পরে সিঙ্গাপুরে পাচার করা হয়েছে। এ ঘটনায় ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা, সাবেক পরিচালনা পর্ষদ সদস্য, বিনিয়োগ কমিটির সদস্যসহ ৬৭ জনকে আসামি করা হয়েছে।
দুদকের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ২০১৭ সালে এস আলম গ্রুপ ইসলামী ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর ব্যাংকের বিনিয়োগ কার্যক্রমে নিয়মিত অনিয়ম ও বিধি লঙ্ঘন শুরু হয়। ২০২০ সালে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ এস আলম রিফাইনড সুগার ইন্ডাস্ট্রিজের ঋণ সীমা ২,৪০০ কোটি থেকে ৩,৮০০ কোটি টাকা বৃদ্ধি করে, যা ব্যাংকের মূলধনের ৩৫ শতাংশের বেশি। এটি ব্যাংক কোম্পানি আইন ১৯৯১ এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলার লঙ্ঘন করে।
তদন্তে দেখা যায়, ব্যাংকের আইটি সফটওয়্যার ম্যানিপুলেশন করে অনুমোদনবিহীনভাবে ঋণসীমা বৃদ্ধি ও মেয়াদ পরিবর্তন করা হয়। সাবেক উপব্যবস্থাপনা পরিচালক তাহের আহমেদ চৌধুরীর নেতৃত্বে এসব লেনদেনে প্রায় ৫,৯০০ কোটি টাকা স্থানান্তর করা হয়।
অর্থ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যেমন আহসান এন্টারপ্রাইজ, দুলারী এন্টারপ্রাইজ, ইউনাইটেড সুপার ট্রেডার্স, গ্লোবাল ট্রেডিং করপোরেশন, এস এস পাওয়ার, এস আলম স্টিলস, এস আলম সিমেন্ট ও সোনালী ট্রেডার্সের মাধ্যমে এস আলম গ্রুপের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোতে স্থানান্তরিত করা হয়।
দুদকের নথিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২৩ সালের ৫ ডিসেম্বর রূপালী ব্যাংকের দিলকুশা শাখা থেকে ২৯০ কোটি টাকা (২৩.৫৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) সিঙ্গাপুরের ব্যাংক অব চায়না শাখায় এস এস পাওয়ার-১ লিমিটেডের অফশোর অ্যাকাউন্টে স্থানান্তরিত করা হয়।
এই মামলায় দায়ী ৬৭ জনের মধ্যে রয়েছেন এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম, তার ভাই রাশেদুল আলম, সহিদুল আলম, স্ত্রী ফারজানা পারভীন, ছেলে আহসানুল আলম, মেয়ে মায়মুনা খানম, ইসলামী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মাহবুব উল আলম, সাবেক চেয়ারম্যান মো. নাজমুল হাসান (পিএইচডি), সাবেক পরিচালক, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বিনিয়োগ কমিটির সদস্যরা।
দুদক জানাচ্ছে, মামলার তদন্ত চলাকালীন আরও নতুন নাম যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ইসলামী ব্যাংকের অর্থনৈতিক অনিয়মের এই ঘটনা বর্তমানে দেশের অন্যতম আলোচিত দুর্নীতি কেলেঙ্কারিতে পরিণত হয়েছে।