খেলাপির তথ্য গোপন করায় ব্যবস্থা নিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক


hgfuyquty34.jpg

তথ্য গোপন করে খেলাপি ঋণ লুকানো ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে অ্যাকশনে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। শুধু ব্যাংক নয়, তদন্ত সাপেক্ষে অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান। তিনি বলেন, ‘যারা এত দিন কেন্দ্রীয় ব্যাংককে মিথা তথ্য দিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে। কারণ তথ্য গোপন ও মিথ্যা তথ্য সরবরাহ একটি গুরুতর অপরাধ।

লুকানো তথ্য বেরিয়ে আসার কারণে বাংলাদেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের এক নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। মোট ঋণের এক-চতুর্থাংশই এখন খেলাপি। ব্যাংক খাতের জন্য এমন সূচক ভয়াবহ সংকেত বহন করে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, ২০২৫ সালের মার্চ শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে চার লাখ ২০ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা, যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।

মাত্র তিন মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৭৪ হাজার ৫৭০ কোটি টাকা।

খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, তথ্য গোপন করার ফলে এত দিন খেলাপি ঋণের প্রকৃত তথ্য প্রকাশ্যে আসেনি। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ব্যাংক থেকে নামে-বেনামে যে অর্থ বের করে নেওয়া হয়েছে, নিয়ম-নীতি স‌ঠিক পরিপালনের কারণে এখন তা খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত হতে শুরু করেছে। ফলে এক বছরের ব্যবধানে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে দ্বিগুণেরও বেশি হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘বার্ষিক পরিদর্শনে ব্যাংকগুলোর অনিয়েমের প্রচুর তথ্য বেরিয়ে আসত বিগত সরকারের আমলে। কিন্তু চিঠি দিয়ে তাদের অনিয়মের কোনো উত্তর পাওয়া যেত না। বিশেষ করে যেসব ব্যাংকের মালিকপক্ষ সরকারের কাছের লোক ছিল তারা তো এসব চিঠি পাত্তাই দিত না। বছরের পর বছর তারা অনিয়ম করেছে, তথ্য গোপন করেছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকে মিথ্যা তথ্য পাঠিয়েছে এবং ভুয়া ব্যালান্স শিট বানিয়েছে। কিন্তু আমরা বড় স্যারদের কারণে কিছুই করতে পারিনি।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ যখন সরকার গঠন করে, তখন মোট খেলাপি ঋণ ছিল ২২ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা। এর পর থেকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়েই চলছে। অর্থনীতিবিদরা অনেক দিন ধরেই অভিযোগ করছেন, তৎকালীন সরকারের ঘনিষ্ঠ ও প্রভাবশালীরা নানা অনিয়মে ব্যাংক থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ বের করে নিয়েছেন, যার একটা বড় অংশই বিদেশে পাচার হয়েছে।

আওয়ামী লীগ সরকারের টানা শাসনামলে দেশের ব্যাংক খাত এক ভয়াবহ সংকটে নিপতিত হয়েছে বলে অর্থনীতিবিদরা অভিযোগ করছেন। ব্যাংকিং খাতজুড়ে এখন অব্যবস্থাপনা, রাজনৈতিক প্রভাব, খেলাপি ঋণের লাগামহীনতা ও মালিকানার অপব্যবহার চরম আকার ধারণ করেছে। বিশেষজ্ঞদের ভাষ্য, এটি আর শুধু একটি অর্থনৈতিক দুরবস্থা নয়, বরং একটি সুসংগঠিত আর্থিক ধ্বংসযজ্ঞ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের মার্চ শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে চার লাখ ২০ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা, যা বিতরণকৃত ঋণের প্রায় এক-চতুর্থাংশ (২৪.১৩ শতাংশ)। এর মধ্যে শুধু ব্যাংক মালিকদের নিজের প্রতিষ্ঠানে নেওয়া ঋণের খেলাপিই প্রায় এক লাখ ৭৫ হাজার কোটি টাকা, যা মোট খেলাপির ৪৪ শতাংশ।

বিশ্লেষকরা বলছেন, রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় কিছু ব্যবসায়ী গোষ্ঠী ব্যাংকের মালিকানা নিয়ে নিজেদেরই ঋণ দিয়ে যাচ্ছে, যা আদৌ ফেরতের কোনো ইচ্ছা নেই। ঋণ অনুমোদনের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা বা ঝুঁকি বিশ্লেষণ উপেক্ষিত হচ্ছে।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বারবার ব্যাংক খাতে সংস্কারের তাগিদ দিলেও বাস্তবে তা উপেক্ষিত। দুর্বল তদারকি, স্বচ্ছতার অভাব, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ এবং কার্যকর প্রশাসনিক ব্যবস্থা না থাকায় ব্যাংক খাত দিন দিন ধ্বংসের দিকে যাচ্ছে। অনেক বিশ্লেষক এটিকে ‘আর্থিক দুর্নীতির মহামারি’ হিসেবে আখ্যায়িত করছেন। সময়মতো সংস্কার না হলে এর প্রভাব গোটা অর্থনীতিতে ভয়াবহভাবে পড়বে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তাঁরা।

ঢাকাওয়াচ২৪ এর খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন ।
ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন [email protected] ঠিকানায়।
×