আমোদ-ফূর্তির জন্য সিলেটে বোর্ডসভা ডেকেছিলেন হোমল্যান্ডের চেয়ারম্যান


February 4 2025/rt yrty rt yrty rt.jpg

কোম্পানির আর্থিক অবস্থা এতটা নাজুক যে গ্রাহকের পাওনা টাকা পর্যন্ত দিতে পারছেন না অথচ আমোদ-ফূর্তির জন্য সিলেটে বোর্ড সভা ডেকেছিলেন হোমল্যান্ড লাইফের চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন।  মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আমোদ ফুর্তির কথা কোম্পানিটির চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন নিজের মুখেই স্বীকার করেন।

গত সপ্তাহে ভারপ্রাপ্ত মুখ্য নির্বাহীসহ ২ কর্মকর্তাকে অব্যাহতি দিয়ে তাদের স্থলে অর্থ আত্মাসাৎ মামলার আসামিকে নিয়োগ দেন কোম্পানিটির চেয়ারম্যান। বোর্ডসভার অনুমোদন ছাড়াই ২ কর্মকর্তাকে অব্যাহতি এবং নতুন করে একজনকে নিয়োগ দেয়ায় সপ্তাহখানিক ধরেই চলছে অস্থিরতা।

খবর নিয়ে জানা যায়, সর্বশেষ ১৪৯তম বোর্ড মিটিংয়ে আবদুল মতিনকে ভারপ্রাপ্ত এমডি এবং লুতফুন নাহার আলোকে উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (মার্কেটিং) হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়। এরপর আর কোন বোর্ড মিটিং ছাড়া কিভাবে তাদেরকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে, এই বিষয়ে কোন যৌক্তিক উত্তর দিতে পারেননি চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন। 

সংবাদ সম্মেলনে চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন ভারপ্রাপ্ত এমডি আবদুল মতিন ও উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (মার্কেটিং) লুতফুন নাহার আলোকে অব্যাহতি ঘোষণা করার পরেও তারা কর্মস্থল ত্যাগ করেননি বলে জানান। 
অপরদিকে একইদিন জাকির হোসেন সরকারকে কোম্পানিটির ডিএমডি ও হেড অব মার্কেটিং পদে নিয়োগ দেয়া হয়। জাকির হোসেন কোম্পানিটির প্রায় এক কোটি টাকা অর্থ আত্মসাতের ২টি মামলার আসামি। এছাড়া কোম্পানির ১০৪ কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনায়ও তিনি অভিযুক্ত। তার বিরুদ্ধে কোম্পানির প্রধান কার্যালয়ে বিশৃংখলা সৃষ্টির অভিযোগে মতিঝিল থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন বীমা কোম্পানিটির ২ কর্মকর্তা।
এর আগে গত ২৩ জানুয়ারি হোমল্যান্ড লাইফের ১৫১তম বোর্ড সভা কোম্পানির প্রধান কার্যালয়ের পরিবর্তে সিলেটের হোটেল ব্রিটানিয়ায় আহবান করে পরিচালকদের নোটিশ প্রদান করা হয়। অথচ এর আগে ১৫১তম সভাটি প্রধান কার্যালয়ের বোর্ড রুমে ২৯ জানুয়ারি বেলা ১২টায় আহবান করা হয়।
সিলেটের ওই বোর্ডসভা আহবানের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট মামলা দায়ের করেন কোম্পানিটির পরিচালক মোহাম্মদ জুলহাস। মামলার শুনানি শেষে ৪ সপ্তাহের জন্য আহূত সকল সভা স্থগিত করে রুল জারি করেন আদালত। হাইকোর্টের বিচারপতি জাফর আহমেদ রোববার (২ ফেব্রুয়ারি) এই আদেশ দেন।

গ্রাহকের ১০৪ কোটি টাকা আত্মাসাৎ সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে জামাল উদ্দিন বলেন, ১০৪ কোটি টাকা আত্মসাতের যে কেউ কারও বিরুদ্ধে করতে পারে বলে প্রশ্নটি এরিয়ে জান। 

কোম্পানীর হেড অফিস ঢাকা থাকা সত্বেও সিলেটে কেন বোর্ডসভা আয়োজন করা হয় প্রশ্ন করলে - প্রশ্নের জবাবে জামাল উদ্দিন বলেন, ২০০১, ২০০২ ও ২০০৩ সালসহ আগের অনেক বোর্ড মিটিং সিলেটে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এবার একটু সমস্যা হয়েছে। আমার সাথে যে ৬/৭ জন পরিচালক লন্ডন থেকে এসেছেন তাদের মধ্যে ২/৩জন খুবই বয়স্ক; তারা বেশ অসুস্থও। আমি চিন্তা করলাম যে, সিলেট একটি ভালো যায়গা; ওরা একটু ভিজিটিং করল, হলিডে করল।

জামাল উদ্দিন আরো বলেন, আমি চাইছিলাম যে, তাদেরকে একটু সমস্ত সিলেট দেখাব। আর আমরা একটু ফূর্তি-আমোদ করব। আমার কলিগরা লন্ডন থেকে আসছে ওরা সেখানে থাকুক। আর এখানকার যে ২/৩ জন কলিগ আছে ওরাও সেখানে যাবে। আমার কোন অসৎ উদ্দেশ্য ছিল না। ওরা যদি আমাকে ফোন করে বলত যে, কেন আপনি (সিলেটে বোর্ডসভা আহবান) করলেন! তখন আমি জবাব দিতাম যে, ভাই ছেড়ে দেন। যেহেতু আপনি আসতে পারছেন না; ঠিক আছে আমি-ই চলে আসতেছি।

অর্থ-আত্মসাতের দায়ে মামলার আসামিকে ডিএমডি পদে নিয়োগ দেয়া সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে জামাল উদ্দিন বলেন, মামলা আছে এ কথা আমি জানি না। তবে তাকে নিয়োগ দেয়ার সময় ৪ জন পরিচালক ছিলেন যাদের মতামত নিয়েই তাকে নিয়োগ দেয়া হয়।

সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্যে হোমল্যান্ড লাইফের চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন বলেন, কোম্পানির ভারপ্রাপ্ত মুখ্য নির্বাহী এবং একজন ডিএমডিকে আমি বরখাস্ত করেছি। তবে ওরা এখনো অফিসে আছে। কেন ওরা অফিসে আছে, তা জানি না।

জামাল উদ্দিন বলেন, আমি থাকি বিদেশে। যা বলি তা হচ্ছে না। আমার নির্দেশ মান্য হচ্ছে না। তাই আমি তাদের টার্মিনেট করেছি। কিন্তু তারা এখনো অফিসে আছে।

সংবাদ সম্মেলনে মঞ্চে বসা অবস্থায় বহিষ্কৃত সাহাদাত হোসেনের কাছে তার পরিচয় জানতে চাইলে তিনি মঞ্চ ত্যাগ করে পালিয়ে যায়। আরেক বহিষ্কৃত ডিজিএম (চট্রগ্রাম সার্কেল) আমিম উল্ল্যাহকে কোম্পানি থেকে একাধিক দুর্নীতির অভিযোগে ২০২৪ সালের ১০ মার্চ বহিষ্কার করা হয়। 

অনুসন্ধানে দেখা যায়, সাবেক ডিএমডি জাকির হোসেনকে ২০১০ সালে দুর্নীতির দায়ে কোম্পানি থেকে বহিষ্কার করা হয়। তার বিরুদ্ধে গ্রাহকের প্রায় এক কোটি টাকা আত্মসাৎ-এর মামলা আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। সাবেক ডিএমডি সাহাদাত হোসেন কোম্পানিতে মাত্র তিন মাস কর্মরত থাকা অবস্থায় অযোগ্য বিবেচিত হয়ে বহিষ্কার হয়। বহিষ্কৃত সাহাদাত হোসেন কোম্পানির এমডি হওয়ার স্বপ্নে এই ষড়যন্ত্রে শামিল হয়েছেন।

জামাল উদ্দিন চেয়ারম্যান পদে থাকা নিয়েও আছে প্রশ্ন, কোম্পানিতে কোন শেয়ার না থাকার পরেও ১৭ বছর ধরে শেয়ার সার্টিফিকেট জালিয়াতি করে অবৈধভাবে হোমল্যান্ড লাইফ ইন্সুইরেন্স লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদে বহাল তবিয়তে আছেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে এবং প্রেস রিলিজে সাবেক চেয়ারম্যান ও বর্তমান পরিচালক জুলহাস ও মোহাম্মদ সালেহ হোসেনের নাম থাকলেও অজানা কারণে পরবর্তীতে ব্যানার এবং প্রেস রিলিজ পরিবর্তন করে তাদের নাম বাদ দেওয়া হয়।

সংবাদ সম্মেলনে কর্মকর্তাদের নিজেদের মধ্যে বাকবিতন্ডাও ছিল দৃষ্টিকটু।  সাড়ে দশ টায় সংবাদ সম্মেলন শুরু করার কথা থাকলে তা শুরু হয় বেলা বারোটার পরে।

সংবাদ সম্মেলন মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন পরিচালক কামাল মিয়া বহিষ্কৃত সাবেক ডিএমডি জাকির হোসেন সরকার, বহিষ্কৃত সাবেক ডিএমডি সাহাদাত হোসেন, চট্রগ্রামের বহিষ্কৃত সাবেক ডিজিএম আমিম উল্ল্যাহ।

ঢাকাওয়াচ২৪ এর খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন ।
ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন [email protected] ঠিকানায়।
×