
আওয়ামী লীগের টানা শাসনামলে টাস্কফোর্স ফর ইন্টারোগেশন সেল বা টিএফআই-জেআইসি সেলে গুম ও নির্যাতন এবং ২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় রাজধানীর রামপুরায় ২৮ জনকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে ১২ জন সেনা কর্মকর্তাকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়েছে।
রোববার ২১ ডিসেম্বর সকাল ১০টার দিকে বাংলাদেশ জেল লেখা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত সবুজ রঙের প্রিজন ভ্যানে করে তাদের ট্রাইব্যুনালে আনা হয়। এ সময় ট্রাইব্যুনাল চত্বরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়।
একই দিনে টিএফআই সেলে গুম ও নির্যাতনের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেপ্তার ১০ সেনা কর্মকর্তা এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ মোট ১৭ জনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের বিষয়ে আদেশ দেওয়ার কথা রয়েছে। এই আদেশের মাধ্যমে মামলার বিচার কার্যক্রম শুরু হবে কি না, সে সিদ্ধান্ত স্পষ্ট হবে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিচারিক বেঞ্চ এ বিষয়ে আদেশ দেবেন।
এ মামলায় মোট ১৭ জন আসামির মধ্যে বর্তমানে গ্রেপ্তার রয়েছেন ১০ জন সেনা কর্মকর্তা। তারা হলেন র্যাবের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. কামরুল হাসান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহাবুব আলম, কর্নেল কেএম আজাদ, কর্নেল আবদুল্লাহ আল মোমেন, অবসর প্রস্তুতিমূলক ছুটিতে থাকা কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান, র্যাবের গোয়েন্দা শাখার সাবেক পরিচালক কর্নেল মো. মশিউর রহমান, লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাইফুল ইসলাম সুমন এবং লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. সারওয়ার বিন কাশেম।
পলাতক আসামিদের মধ্যে রয়েছেন শেখ হাসিনার প্রতিরক্ষা বিষয়ক সাবেক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল অবসরপ্রাপ্ত তারিক আহমেদ সিদ্দিক, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, সাবেক আইজিপি বেনজির আহমেদ, র্যাবের সাবেক ডিজি এম খুরশিদ হোসেন, সাবেক মহাপরিচালক ব্যারিস্টার হারুন অর রশিদ এবং র্যাবের সাবেক পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল অবসরপ্রাপ্ত মো. খায়রুল ইসলাম।
গত ১৪ ডিসেম্বর মামলার শুনানিতে গ্রেপ্তার তিন আসামির পক্ষে আইনজীবী হামিদুল মিসবাহ এবং সাতজনের পক্ষে তাবারক হোসেন যুক্তি উপস্থাপন করেন। আসাদুজ্জামান খাঁন কামালসহ তিনজনের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী এম হাসান ইমাম শুনানি করেন। আরও তিনজনের পক্ষে ছিলেন সুজাদ মিয়া এবং শেখ হাসিনার পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মো. আমির হোসেন। শুনানিতে প্রত্যেক পক্ষই ভিন্ন ভিন্ন গ্রাউন্ড তুলে ধরে তাদের মক্কেলের অব্যাহতি চান। অপরদিকে প্রসিকিউশনের পক্ষে প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর আবেদন জানান। সব পক্ষের বক্তব্য শেষে আদেশের জন্য আজকের দিন ধার্য করেন ট্রাইব্যুনাল।
এর আগে ৩ ডিসেম্বর অভিযোগ গঠনের ওপর শুনানি শেষ করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। শুনানিতে তিনি টিএফআই সেলের ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরে বলেন, গুমের অন্ধকার পেরিয়ে দীর্ঘ ১৬ বছর পর ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট এক নতুন বাংলাদেশ উদিত হয়েছে। তিনি আরও উল্লেখ করেন, গুম হওয়া ব্যক্তিদের ভাগ্য সাধারণত দুইভাবে নির্ধারিত হতো। ভাগ্য ভালো হলে তাদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হতো, আর অন্যদের সাত থেকে আট বছর গুম করে রাখার পর অজ্ঞাত স্থানে ফেলে দেওয়া হতো।
চলতি বছরের ২২ অক্টোবর সেনা হেফাজতে থাকা ১০ কর্মকর্তাকে প্রথমবারের মতো ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। শুনানি শেষে ট্রাইব্যুনাল-১ তাদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয়। একই সঙ্গে পলাতক আসামিদের হাজির করতে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের আদেশ দেওয়া হয়। নির্ধারিত সময়ে তারা উপস্থিত না হওয়ায় আদালত তাদের পক্ষে স্টেট ডিফেন্স নিয়োগ করেন। এর আগে ৮ অক্টোবর প্রসিকিউশন মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে এবং অভিযোগ আমলে নিয়ে ট্রাইব্যুনাল সব ১৭ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে।