
সিলেট নগরীর বহুদিন ধরে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত ২৩টি ভবন অবশেষে উচ্ছেদ করা হবে। নগরের ভবনগুলোর ভূমিকম্প প্রস্তুতি ও জরুরি পদক্ষেপ নির্ধারণের জন্য সোমবার (২৪ নভেম্বর) বিকেল ৪টায় একটি মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. জহির বিন আলম জানান, সিসিকের তালিকাভুক্ত ২৪টি ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের মধ্যে রয়েছে কালেক্টরেট ভবন-৩, সমবায় ব্যাংক ভবন মার্কেট, মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তার সাবেক কার্যালয়, সুরমা মার্কেট, সিটি সুপার মার্কেট, মিতালী ম্যানশন, আজমীর হোটেল, মধুবন মার্কেট, মান্নান ভিউ, শুভেচ্ছা-২২৬, চৌকিদেখী ৫১/৩ সরকারি ভবন, নবপুষ্প-২৬/এ, রাজা ম্যানশন, কিবরিয়া লজ, মিতালী-৭৪, মেঘনা-এ-৩৯/২, পাঠানটুলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ওয়ারিছ মঞ্জিল, হোসেইন মঞ্জিল, শাহনাজ রিয়াজ ভিলা, নূরানি-১৪, পৌর বিপণি ও শপিং সেন্টার, প্রভাতী হাউস ও শ্রীধরা হাউস।
ড. জহির বিন আলম বলেন, “আমরা নিজেদের উদ্যোগে ৬ হাজার ভবন জরিপ করে ২৪টি ভবনকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছি। বাস্তবে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের সংখ্যা আরও বেশি। সিলেট নগরের প্রায় ৪৪ হাজার ভবনই সার্বিক জরিপের আওতায় আনা জরুরি।”
২০১৯ সালের ভূমিকম্পের পর বিশেষজ্ঞরা এই ভবনগুলো ভেঙে ফেলার সুপারিশ করেছিলেন, তবে সিসিক দীর্ঘদিন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। সুরমা মার্কেট ও সিটি সুপার মার্কেটসহ সাতটি বিপণিবিতান অল্প সময়ের জন্য বন্ধ রাখা হলেও পরে কেবল রঙ করে পুনরায় চালু করা হয়েছে। ছয় বছর পার হলেও তালিকাভুক্ত অনেক ভবন এখনও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে।
সভায় সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনার খান মো. রেজা উন-নবীর সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার আলম, সিসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রেজাই রাফিন সরকার, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. জহির বিন আলমসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তারা।
সভা শেষে জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার আলম বলেন, “ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোতে এখনও অনেকেই বসবাস ও ব্যবসা করছেন, যা বড় ধরনের দুর্ঘটনার ঝুঁকি সৃষ্টি করছে। নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতেই জরুরি ভিত্তিতে ভবনগুলো ভাঙার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আগামী সপ্তাহ থেকেই অপসারণ কার্যক্রম শুরু হবে। এছাড়া, নগরের অনেক সড়ক সংকীর্ণ হওয়ায় দুর্যোগের সময় উদ্ধারকাজে বাধা সৃষ্টি হতে পারে; তাই এ বিষয়ে বাড়তি সতর্কতা নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।”
সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রেজাই রাফিন সরকার বলেন, “দুর্যোগ মোকাবিলায় সক্ষমতা আরও বাড়াতে আমরা সব দপ্তরের মধ্যে সমন্বয় বাড়ানোর চেষ্টা করছি। আমাদের অনেক যন্ত্রপাতি রয়েছে সেগুলোতে প্রস্তুত রাখছি, যাতে সময়মতো হাতের কাছে পাওয়া যায়। দুর্যোগকবলিতদের উদ্ধারের জন্য আমরা প্রশিক্ষণ দিয়ে আরও স্বেচ্ছাসেবক তৈরি করব।”
সভায় সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস, জালালাবাদ গ্যাস, আনসার ভিডিপি, সিভিল সার্জনের কার্যালয়, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা, ইসলামিক রিলিফ, বিএনসিসি, স্কাউট ও গার্লস গাইডসহ সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।