ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে মাদ্রাসা শিক্ষক গ্রেফতার


ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে মাদ্রাসা শিক্ষক গ্রেফতার

কুড়িগ্রামের উলিপুরে এক মাদ্রাসার আবাসিক ছাত্রীকে (১৩) ধর্ষণের চাঞ্চল্যকর অভিযোগ উঠেছে ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা প্রধানের বিরুদ্ধে। এই গুরুতর ঘটনায় ভুক্তভোগী ছাত্রীর বাবা বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেছেন। মামলার প্রেক্ষিতে অভিযুক্ত শিক্ষককে ইতোমধ্যে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সোমবার দুপুরের পর তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের কাছে সোপর্দ করা হয়।

উলিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিল্লুর রহমান সংবাদমাধ্যমকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

অভিযুক্ত মাদ্রাসা শিক্ষকের নাম হাফেজ রিয়াজুল ইসলাম। তিনি উলিপুর উপজেলার তবকপুর ইউনিয়নের আদর্শ বাজার (সরাইপাড়) এলাকার বাসিন্দা এবং বিবাহিত। তিনি তাঁর স্ত্রীসহ ইউনিয়নের মাটিয়াল আদর্শ বাজার বিবি মরিয়ম রিয়াজুল জান্নাহ কিন্ডার গার্ডেন এন্ড হাফেজিয়া মাদ্রাসায় (আবাসিক) বসবাস করেন। ছাত্রী ও তার পরিবারের অভিযোগ, কয়েকদিন আগে স্ত্রীর অনুপস্থিতিতে রিয়াজুল মাদ্রাসার আবাসিক এক ছাত্রীকে ধর্ষণ করেন।

এর আগে রবিবার (১২ অক্টোবর) দিবাগত রাতে ভুক্তভোগী ছাত্রীর পরিবারের সদস্য এবং এলাকার লোকজন ওই শিক্ষককে আটক করে। পরে তাকে চিলমারী উপজেলার থানাহাট ইউনিয়নের মধ্য প্রামাণিক পাড়ার একটি মক্তবে আটকে রেখে মারধর করা হয়। এই সময় স্থানীয় কয়েকজন যুবক শিক্ষকের কাছ থেকে স্বীকারোক্তি আদায় করে তা মোবাইলে ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়। পরে খবর পেয়ে চিলমারী থানা পুলিশ রাতেই অভিযুক্ত শিক্ষককে উদ্ধার করে।

ভুক্তভোগী ছাত্রী ও তার বাবা-মায়ের দেওয়া তথ্যমতে, গত ৫ অক্টোবর রাতে শিক্ষক রিয়াজুল ইসলাম ওই আবাসিক ছাত্রীকে তার থাকার ঘর থেকে নিজের শোবার ঘরে ডেকে নেন। সেখানে তিনি ছাত্রীর মুখ চেপে ধরে তাকে ধর্ষণ করেন। ছাত্রী বাধা দিলে শিক্ষক তার বুকে ও মাথায় আঘাত করেন, যার ফলে ছাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরের দিন তাকে ব্যাথানাশক ওষুধ খেতে দেন শিক্ষক নিজেই। এরপর ছাত্রীর খালা তাকে মাদ্রাসায় দেখতে গেলে, সে তার খালার কাছে ধর্ষণের ঘটনাটি জানায়। ঘটনার পর ছাত্রীর বাবা তাকে মাদ্রাসা থেকে বাড়ি নিয়ে যান।

ছাত্রীর পরিবার ও স্থানীয়দের হাতে আটক থাকাকালীন, অভিযুক্ত শিক্ষক ধর্ষণ চেষ্টার কথা ‘স্বীকার’ করেন। তবে সেই ভিডিওতে শিক্ষক জানান, তিনি স্ত্রীসহ মাদ্রাসায় থাকেন এবং এক সপ্তাহ আগে তার স্ত্রী বাবার বাড়িতে যান। ওই রাতে তিনি আবাসিক ছাত্রীকে নিজের ঘরে ডেকে নিয়ে মুখ চেপে ধরে ধর্ষণ চেষ্টা করেন। ছাত্রী বাধা দেওয়ায় তিনি তাকে মারধরও করেন। তবে তিনি ধর্ষণের কথা স্বীকার করেননি, কেবল ধর্ষণ চেষ্টার কথা স্বীকার করেন।

ভুক্তভোগী ছাত্রীর মা অভিযোগ করে বলেন, “শুধু আমার মেয়ে না, রিয়াজুল আরও কয়েকজন ছাত্রীর ক্ষতি করেছে। সে সেটা স্বীকারও করেছে। আমরা ওর কঠোর শাস্তি চাই।”

অন্যদিকে, অভিযুক্ত শিক্ষক রিয়াজুলের স্ত্রী তাঁর স্বামীর বক্তব্য সমর্থন করে বলেন, “আমার স্বামীর বক্তব্যের বাইরে আমার বক্তব্য নেই। তাকে মেরে জোর করে স্বীকারোক্তি নেওয়া হয়েছে।”

উলিপুর থানা চত্বরে উপস্থিত রিয়াজুলের বড় ভাই বিজু মিয়া বলেন, “আমার ভাই আমাকে ও তার স্ত্রীকে বলেছে যে, তাকে মেরে জোর করে স্বীকারোক্তি দিতে বাধ্য করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ সত্য নয়। তাকে ফাঁসানো হয়েছে। তবে কেন ফাঁসানো হয়েছে সেটা আমি জানি না।”

ওসি জিল্লুর রহমান সর্বশেষ পরিস্থিতি জানিয়ে বলেন, “মামলা হয়েছে। চিলমারী থানা পুলিশ আসামিকে আমাদের কাছে হস্তান্তর করেছে। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে। ভুক্তভোগী ছাত্রীর স্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।”

ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন [email protected] ঠিকানায়।
×