সরকারি অনুষ্ঠানে মুজিব শতবর্ষের লোগো সংবলিত লিফলেট বিতরণ


সরকারি অনুষ্ঠানে মুজিব শতবর্ষের লোগো সংবলিত লিফলেট বিতরণ

খুলনায় বিশ্ব বসতি দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক সরকারি অনুষ্ঠানে বিতরণ করা হয় মুজিব শতবর্ষের লোগো সম্বলিত লিফলেট, যা ঘিরে তৈরি হয়েছে ব্যাপক বিতর্ক ও ক্ষোভ। শেখ হাসিনা সরকারের বিদায়ের পরও এমন লিফলেট বিতরণে বিরূপ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন অনুষ্ঠানে উপস্থিত বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা।

সোমবার ৬ অক্টোবর সকালে খুলনা শিল্পকলা একাডেমিতে খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কেডিএ) আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে বিতর্কিত লিফলেট বিতরণ করা হয়। আলোচনাসভা চলাকালে অতিথিদের হাতে হস্তান্তর করা হয় লিফলেটগুলো, যেখানে স্পষ্টভাবে মুজিব শতবর্ষের লোগো ব্যবহৃত হয়েছে। শেখ হাসিনার সরকারের পতনের এক বছর পরও সরকারি আয়োজনে এমন লোগো ব্যবহারে অনেকেই বিস্ময় প্রকাশ করেন।

কেডিএর এ ধরনের কর্মকাণ্ডে অনুষ্ঠানে উপস্থিত অনেকেই তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারা মনে করেন, এই লিফলেট বিতরণ শুধু রাজনৈতিক শিষ্টাচার লঙ্ঘনই নয়, বরং গণঅভ্যুত্থানের চেতনার সঙ্গে প্রতারণা। উপস্থিত একজন বলেন, "খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের এমন কাজ গণঅভ্যুত্থানের চেতনাকে চরমভাবে অসম্মান করেছে। যা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া হবে না। গণহত্যাকারী শেখ পরিবার বাবার প্রতি জাতির কোনো শ্রদ্ধা নেই। এত কিছুর পরও যারা তার উপর শ্রদ্ধা দেখাচ্ছেন কেডিএর সেসব কর্মকর্তারা স্বৈরাচারের দোসর।"

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের খুলনা জেলা শাখার সদস্য সচিব সাজিদুল ইসলাম বাপ্পি বিষয়টিকে “ফ্যাসিস্ট শাসনের ধারা অব্যাহত রাখার চেষ্টা” বলে আখ্যা দেন। তার ভাষায়, "ফ‍্যাসিস্ট হাসিনা বিদায় নিলেও প্রশাসনে এখনো তাদের দোসররা নেতৃত্ব দিচ্ছে। কেডিএর মুজিবের লোগো সংবলিত লিফলেট বিতরণ কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। তদন্ত ছাড়া কর্তৃপক্ষ কী করে বলে এটা ভুল করে হয়েছে। ভুলে হলেও তো এর কোনো ক্ষমা নেই।"

তিনি আরও বলেন, “৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তদন্ত করে এ কাজের সঠিক বিচার না হলে আমরা কঠোর আন্দোলন করতে বাধ্য হবো। এর সাথে জড়িত কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না। গণঅভ্যুত্থানের এতগুলো মানুষের জীবনের বিনিময়ে যে স্বাধীনতা অর্জন করা হয়েছে, কেডিএর এ ধরনের কাজ সেই শহীদদের অপমানের সমান। তা কোন ছাত্র-জনতা মেনে নেবে না।”

লিফলেটগুলোতে কেডিএর পরিকল্পনা শাখার নাম থাকলেও বিভাগটির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তানভীর আহম্মেদ জানান, তিনি এই কমিটির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন না। তার বক্তব্য, “লিফলেট কমিটিতে আমি ছিলাম না। তাই এর কোনো দায়ভার আমি নিতে পারব না।”

এদিকে বিতর্ক ঘনীভূত হওয়ার পর কেডিএর চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ জাহাংগীর হোসেন বিষয়টি ‘অনিচ্ছাকৃত ভুল’ বলে উল্লেখ করে দুঃখ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, “ভুলবশত এ লিফলেটগুলো চলে এসেছে। আমরা অনেক লিফলেট বিতরণ করেছি, এর সাথে পুরোনো কিছু চলে গেছে। আমরা যখন এটা জানতে পেরেছি তখনই এগুলোকে বাতিল করেছি।”

তিনি আরও জানান, “ভুলবসত করা কাজের তো কিছু করা যায় না। ইচ্ছাকৃত আর অনিচ্ছাকৃত করা কাজ তো আলাদা। তারপরও আমরা খুঁজে দেখছি। অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করব।”

ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন [email protected] ঠিকানায়।
×