‎কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনে নিঃস্ব শত শত পরিবার


‎কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনে নিঃস্ব শত শত পরিবার

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্র নদীর ভয়াবহ ভাঙনে প্রতিদিনই নিঃস্ব হচ্ছে নদীপাড়ের মানুষ। মাত্র এক মাসে বানিয়াপাড়া, ফান্দের চর, শালমারা, নুচনি, খেতাবখাসহ কয়োকটি গ্রামে প্রায় তিন শতাধিক পরিবারের বসতবাড়ি এবং হাজার হাজার একর ফসলি জমি নদীর স্রোতে বিলীন হয়েছে। ভাঙনের কবলে পড়া মানুষদের কেউ আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন, কেউ আবার অস্থায়ীভাবে অন্যত্র চলে গেছেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, পরিবারগুলো নিজেদের ঘরবাড়ি সরিয়ে নিচ্ছেন। নদীর তীরবর্তী গরু-ছাগল, আসবাবপত্র ও বাঁশের বেড়া সবকিছুই ভেসে যাচ্ছে, যেন নিঃস্ব মানুষদের মতো দিকহারা হয়ে।

নদী ভাঙনের শিকার কৃষক আমজাদ আলী (৭০) বলেন, “এ পর্যন্ত আমার বাড়িঘর পাঁচবার নদীর ভাঙনে বিলীন হয়েছে। এবার আবারও বাড়ি ভাঙল। কোথায় যাব, চিন্তায় আছি।”
স্থানীয়রা আমিনুল ইসলাম (৫০), আব্দুল জলিল (৬০) ও আসাদুল ইসলাম (৫৫) অভিযোগ করেন, “সরকার হামার দেখি দেখে না। নদীর ভাঙনে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। এবার বাড়িঘর ভাঙলে নিঃস্ব হয়ে যাবো।”

চরভিত্তিক গবেষণা ও অধিকার আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম ‘জাস্টিস ফর চর’স অ্যান্ড লোকাল রিসার্চ’-এর পরিচালক স্বপন কুমার সরকার বলেন, “কুড়িগ্রামের মানুষের সবচেয়ে বড় দুর্ভোগ হলো নদী ভাঙন। প্রতিবছর শত শত পরিবার গৃহহীন হচ্ছে, কৃষিজমি বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এটি কেবল কুড়িগ্রামের নয়, জাতীয় সমস্যা। সরকারকে দ্রুত স্থায়ী তীররক্ষা প্রকল্প হাতে নিতে হবে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও বিষয়টি তুলে ধরা জরুরি, যাতে বিশ্বনেতারা চরের মানুষের পাশে দাঁড়ান।”

যাত্রাপুর ইউনিয়ন পরিষদের (প্যানেল) চেয়ারম্যান রহিমুদ্দিন হায়দার রিপন বলেন, “দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া না হলে কুড়িগ্রামের ঐতিহ্যবাহী যাত্রাপুর হাটসহ পুরো গ্রাম ভাঙনের হুমকিতে পড়বে।”

কুড়িগ্রাম জেলা খামারবাড়ির উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, “নদীর ভাঙনে হাজার হাজার একর ফসলি জমি বিলীন হচ্ছে। এতে কৃষকদের জীবন-জীবিকা মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সহায়তাও প্রয়োজন।”

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিবুল হাসান জানান, “ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে। ভাঙন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।”

নদী ভাঙন অব্যাহত থাকলে কুড়িগ্রামের নদীপাড়ের মানুষের নিরাপত্তা ও কৃষিজীবিকার জন্য গুরুতর হুমকি সৃষ্টি হবে।

ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন [email protected] ঠিকানায়।
×