ব্যবসায়ীর কাছে থেকে সাবেক বিএনপি নেতার ৪ কোটি টাকা চাঁদা আদায়
- যশোর প্রতিনিধি
- প্রকাশঃ ০৭:০৫ পিএম, ০২ আগস্ট ২০২৫

যশোরের অভয়নগর উপজেলার নওয়াপাড়া শিল্পাঞ্চলে চাঁদাবাজির গুরুতর অভিযোগ ঘিরে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। স্থানীয় ব্যবসায়ী শাহনেওয়াজ কবীর টিপুর কাছ থেকে চার কোটি টাকা আদায়ের অভিযোগ এনে অভয়নগর থানা ও আর্মি ক্যাম্পে লিখিত অভিযোগ করেছেন তার স্ত্রী আসমা খাতুন। অভিযোগে বিএনপি ও সাংবাদিক সমাজের দুই প্রভাবশালী ব্যক্তির নাম উঠে এসেছে।
চাঞ্চল্যকর এ ঘটনায় নাম এসেছে নওয়াপাড়া পৌর বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও বর্তমানে বহিষ্কৃত নেতা আসাদুজ্জামান জনি এবং নওয়াপাড়া প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মফিজ উদ্দিনের।
অভয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল আলিম অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ২ সেপ্টেম্বর সকাল ১০টায় ব্যবসায়ী শাহনেওয়াজ কবীর টিপুকে কৌশলে নওয়াপাড়া পৌর বিএনপির তৎকালীন নেতা জনির অফিসে নিয়ে যান সৈকত হোসেন হিরা নামের একজন ব্যক্তি। সেখানে পৌঁছানোর পর জনি তাকে মারধর করেন এবং অস্ত্র দেখিয়ে জিম্মি করে দুই কোটি টাকা দাবি করেন। এরপর টিপুর স্ত্রী সাউথ বাংলা ব্যাংক থেকে জনির প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্টে দুই কোটি টাকা আরটিজিএসের মাধ্যমে পাঠান। টাকা পাওয়ার পর ওইদিন টিপুকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
অভিযোগে আরও বলা হয়, ঘটনার ১৬ দিন পর, ১৮ সেপ্টেম্বর সকাল ৯টার দিকে ব্যবসায়ী টিপু নিজ গ্রাম চলিশিয়া থেকে বাজারের উদ্দেশ্যে মোটরসাইকেলে রওনা দেন। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের গেট পার হওয়ার পর তার গতিরোধ করেন সৈকত হোসেন হিরা। এরপর দুপুর ৩টা পর্যন্ত টিপুর ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। পরে জানা যায়, তাকে নওয়াপাড়ার কনা ইকো পার্কে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
সেখানে পৌঁছালে টিপুর স্ত্রী আসমা খাতুন দেখেন, জনি, সম্রাট হোসেন এবং প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মফিজ উদ্দিন অস্ত্রের মুখে আবারও টিপুকে মারধর করেন। এরপর একটি বুকসমান গর্ত খুঁড়ে তাকে বালু চাপা দিয়ে রাখেন এবং আরও দুই কোটি টাকা দাবি করেন।
টিপু বাধ্য হয়ে তার ম্যানেজারকে ফোন করে টাকা পাঠাতে বলেন। এরপর তার ম্যানেজার সাংবাদিক মফিজ উদ্দিনের অ্যাকাউন্টে পূবালী ব্যাংক থেকে ৬৮ লাখ এবং সাউথ বাংলা ব্যাংক থেকে ৩২ লাখ টাকা আরটিজিএস করেন। এছাড়া, মফিজের মাধ্যমে আরও এক কোটি টাকার একটি চেক আদায় করা হয়। একইসঙ্গে জনির নামে কেনা তিনটি ও দিলিপ সাহার নামে কেনা তিনটি ১০০ টাকার ফাঁকা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেওয়া হয়।
অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, এ ঘটনাটি প্রকাশ করলে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে টিপুকে মুক্তি দেওয়া হয়।
ঘটনার প্রায় এক বছর পর, গত ৩০ জুলাই (বুধবার) অভয়নগর থানায় এবং ৩১ জুলাই (বৃহস্পতিবার) অভয়নগর আর্মি ক্যাম্পে লিখিত অভিযোগ দেন টিপুর স্ত্রী আসমা খাতুন।
এই অভিযোগ প্রকাশ্যে আসার পর যশোর জেলায় ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। অভিযুক্ত আসাদুজ্জামান জনি ও মফিজ উদ্দিনের মোবাইল ফোন বন্ধ রয়েছে বলেও জানা গেছে।
জেলা বিএনপির সভাপতি সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু বলেন, ‘সংগঠনবিরোধী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে জনির বিরুদ্ধে আগেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সে এখন আমাদের কেউ না।’ তিনি আরও বলেন, ‘ব্যবসায়ীর কাছ থেকে টাকা আদায়ের বিষয়ে কোনো তথ্য জানা নেই। তার কর্মকাণ্ডে আমাদের দল কোনো দায় নেবে না।’
এদিকে, অভয়নগর থানার ওসি আব্দুল আলিম জানান, ‘অভিযোগটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এর পরই যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’